স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠেয় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস (এমডব্লিউসি) থেকে একে একে নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। প্রযুক্তি প্রদর্শনীর অন্যতম বৃহৎ এ আয়োজন থেকে সর্বশেষ নাম প্রত্যাহার করেছে ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি ইলেকট্রনিকস, সুইডিশ টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এরিকসন, মার্কিন চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া আয়োজন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
অ্যামাজনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বিস্তার নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ বিবেচনায় তারা বার্সেলোনায় অনুষ্ঠেয় এমডব্লিউসি ২০২০ আয়োজনে যোগ দিতে পারছে না। এর আগে বাকিরাও একই উদ্বেগের কথা বলে নাম প্রত্যাহার করেছে। ফলে আয়োজনটি এ বছর অনেকটা আকর্ষণ হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এরপরও আয়োজকরা বলছেন, বড় কোম্পানিগুলো নাম প্রত্যাহার করলেও আয়োজনে ব্যাঘাত ঘটবে না। যদিও উল্লিখিত চারটি কোম্পানি ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনীতে যোগ দেবে কিনা, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে তারা স্বীকার করেছে।
এমডব্লিউসি ২০২০-এর প্রধান আয়োজক জিএসএমএর বিবৃতি অনুযায়ী, এবারের আয়োজন অর্থনীতিতে ৪৯ কোটি ২০ লাখ ইউরোর সমান প্রভাব ফেলবে। ২৪-২৭ ফেব্রুয়ারি আয়োজন চলাকালে ১৪ হাজারের বেশি খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ তৈরি হবে। তাছাড়া আয়োজক প্রতিষ্ঠান জিএসএমএ বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ২০০-এর বেশি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত একটি ইকোসিস্টেমের প্রতিনিধিত্ব করে।
এর মধ্যে এনভিডিয়ার নাম প্রত্যাহারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। কারণ এ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কনফারেন্সের প্রধান স্পন্সর। জিএসএমএর সহযোগিতায় অনুষ্ঠেয় এ কনফারেন্সের ১০টি সেশন এবং গোলটেবিল বৈঠক হওয়ার কথা। এ বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। গত শনিবার কোম্পানিটি তাদের কর্মী, গ্রাহক ও অংশীদারদের নিরাপত্তার কথা বলে আয়োজন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরই আয়োজন থেকে নাম কাটায় এরিকসন ও এলজি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আরো কয়েকটি কোম্পানি নাম প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করছে। শিগগিরই তারা আগের চারটিকে অনুসরণ করবে।
জিএসএমএ জানিয়েছে, কয়েকটি বড় কোম্পানি প্রদর্শনীতে না আসার কথা নিশ্চিত করেছে। আরো কয়েকটি এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। তবে ২ হাজার ৮০০ বা তার কিছু বেশি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে এটা নিশ্চিত।
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারীদের আশ্বস্ত করতে নানা পদক্ষেপও নিচ্ছে আয়োজকরা। অংশগ্রহণকারী ও দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে প্রচার করছে তারা। পাশাপাশি চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দাদের প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া নিষিদ্ধ করেছে আয়োজকরা। এছাড়া চীনের বাইরের যারা প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন বা দর্শনার্থী হিসেবে আসবেন, তাদের দেশটির বাইরে কমপক্ষে ১৪ দিন অবস্থানের প্রমাণ দেখাতে হবে।
আগাম সতর্কতা হিসেবে জিএসএমএ আরো বলেছে, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি পরামর্শ থাকবে, তারা একে অন্যের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করবেন না। বক্তাদের ব্যবহূত মাইক্রোফোন প্রতিবার পরিবর্তন ও জীবাণুমুক্ত করা হবে।
আয়োজকরা আশা করছেন, এবারের প্রদর্শনীতে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার দর্শনার্থী হবে। যেখানে প্রতি বছর এ আয়োজনে গড়ে এক লাখ লোকের সমাবেশ ঘটে।
এদিকে চীনের নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হাজার ছুঁতে চলেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি বিশেষজ্ঞ দল বেইজিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। বিশ্বব্যাপী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১০-এ। এর মধ্যে চীনের মূল ভূখণ্ডেই মারা গেছে ৯০৮ জন। এছাড়া হংকং ও ফিলিপাইনে একজন করে মারা গেছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে মারা গেছে ৯৭ জন। এখন পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ।
এ পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুর এয়ারশো নিয়েও কিছুটা অনিশ্চয়তায় আছেন আয়োজকরা। আজ শুরু হচ্ছে এ প্রদর্শনী। বিখ্যাত মার্কিন উড়োজাহাজ কোম্পানি লকহিড মার্টিন এরই মধ্যে আয়োজন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বোম্বার্ডিয়ার এবং গালফ স্ট্রিমের মতো প্রতিষ্ঠানও জানিয়ে দিয়েছে তারা এয়ারশোতে অংশ নিচ্ছে না।