গত বছরের অক্টোবরে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন ও ভোডাফোন আইডিয়াসহ কয়েকটি সেলফোন অপারেটরকে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি রুপি বকেয়া অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর) পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। একইসময় দেশটির টেলিকম বিভাগকে (ডিওটি) তিন মাসের মধ্যে এ অর্থ আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে বকেয়া এজিআর পরিশোধ না করায় এবার ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেলফোন অপারেটরগুলোকে
বকেয়া অর্থ ডিওটিকে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।
১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের টেলিকম বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারতীয়
সেলফোন অপারেটরগুলোর লাইসেন্স ফি এবং স্পেকট্রাম চার্জ বাবদ যে বকেয়া রয়েছে, তা ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
২০০৫ সাল থেকে এজিআরের সংজ্ঞা নিয়ে ভারতের ব্যক্তি খাতের টেলিকম কোম্পানি ও ডিওটির মধ্যে আইনি লড়াই চলে আসছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে এজিআর নিয়ে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন, ভোডাফোন আইডিয়ার মতো টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন খারিজ করে দিয়ে ডিওটির সংজ্ঞাকে বৈধতা দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একই সময় বকেয়া পরিশোধে সেলফোন অপারেটরগুলোকে গত মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। এর কয়েক সপ্তাহ পর দেশটির সেলফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। তবে এজিআর নিয়ে আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনও খারিজ হয়ে যায়।
ডিওটি এর আগে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, নির্ধারিত সময়ে বকেয়া এজিআর পরিশোধে ব্যর্থ হলে সেলফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না। তবে গত শুক্রবারের চিঠিতে আগের বিবৃতি তুলে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেলফোন অপারেটরগুলো বকেয়া এজিআর পরিশোধে ব্যর্থ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ডিওটি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতীয় সেলফোন অপারেটরগুলোকে এজিআর
বাবদ মোট ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি রুপি বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ৯২ হাজার কোটি রুপি সরকারকে পরিশোধ করতে হবে লাইসেন্স ফি বাবদ এবং স্পেকট্রাম ফি বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৫৫ হাজার কোটি রুপি।
গত শুক্রবার সকালে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বকেয়া পরিশোধ না করা এবং নির্ধারিত সময়ে বকেয়া আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় সেলফোন অপারেটরগুলোর পাশাপাশি ডিওটি ও দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করা হয়। এছাড়া এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সেলফোন অপারেটরগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আগামী ১৭ মার্চ আদালতে হাজিরা দিতে বলেছেন।
ভারতী এয়ারটেল গত শুক্রবার আদালতের সিদ্ধান্ত জানার পর জানিয়েছে, তারা ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোট বকেয়ার ১০ হাজার কোটি রুপি পরিশোধ করবে। অন্যদিকে রিলায়েন্স জিও ২৩ জানুয়ারির মধ্যে
তাদের এজিআর বাবদ বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা। গত ডিসেম্বরেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কুমার মঙ্গলম বিড়লা জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা ছাড়া এ বড় অংকের বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব নয়। বকেয়া
এজিআর নির্ধারিত সময়ে পরিশোধে বাধ্য করা হলে অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ভারতের সেলফোন অপারেটরগুলো ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বকেয়া এজিআর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। আদালতের প্রথম নির্দেশের পর নির্ধারিত
সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি ভারতী এয়ারটেল। এবার প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া এজিআরে আংশিক পরিশোধে আগ্রহের কথা বলছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, আদালতের রায় নতুন-পুরনো মিলে ভারতের ১৫টি সেলফোন অপারেটরের ওপর প্রভাব ফেলবে। এর মধ্যে ব্যক্তি খাতের বড় দুটি অপারেটরের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। এ সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে সরকারের অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। সেলফোন অপারেটরগুলোর চাপিয়ে দেয়া এ আর্থিক বোঝা দূর করার জুতসই পদ্ধতি বের করার বিকল্প নেই। কারণ ভারতের টেলিকম বিভাগের দাবি করা বকেয়া অর্থ পরিশোধ করার মতো অবস্থায় নেই ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া ও রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস।