বিশ্বজুড়েই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (আইসিটি) ব্যয় বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু এশিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তিতে মূলধনি ব্যয় ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে (৩৬৯ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছাবে। ২০১৮ সালে অঞ্চলটিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মূলধনি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার (১৯৩ বিলিয়ন ডলার)। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওমডিয়ার এক প্রতিবেদনে এমনই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে দ্রুত। তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখন ডিজিটাল ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে। খাতটিতে এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত বিশ্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যে কারণে এ খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ব্রডব্যান্ড সেবা সরবরাহকারী, ক্যারিয়ার নিউট্রাল সেবাদাতা এবং ডাটা সেন্টার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) এখন মোবাইল কানেক্টিভিটি জোরদার, সেলুলার টাওয়ার নির্মাণ এবং ডাটা সেন্টার সক্ষমতা জোরদারে ধারাবাহিকভাবে মূলধনি বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
ওমডিয়ার এশিয়া অঞ্চলের প্র্যাকটিস লিডার ডেভিড কেনেডি বলেন, এশিয়া অঞ্চলে ডাটা ও কমিউনিকেশন খাতে সেবা দিচ্ছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে অবকাঠামো প্রস্তুতে বড় অংকের বিনিয়োগ করছে। মূলত নতুন যুগের চাহিদা পূরণে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে। এশিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি সেবাসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে উন্নত বিশ্বের চেয়ে সক্ষমতার দিক থেকে এশিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে মুদ্রা অস্থিরতা এবং সম্ভাব্য মন্দার কারণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। যে কারণে তথ্যপ্রযুক্তিতে মূলধনি ব্যয়ে আগামীতে কিছুটা শ্লথগতি দেখা যেতে পারে। তবে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবেন। কারণ তারা প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয় বাড়াতে আগ্রহী। তবে ব্যয়ের ধরনে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
২০১৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যয় বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে ডিজিটাল ব্যবসা, ব্লকচেইন, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), মেশিন লার্নিং (এমএন) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আধিপত্য বিস্তার করবে আইওটি ডিভাইস। এশিয়া, বিশেষ করে চীন আইওটি সংযোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আগামীতে আইওটি ডিভাইস ব্যবহারে চীনের আধিপত্য আরো বিস্তৃত হবে। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সেবা এবং অ্যাপ্লিকেশনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এশিয়ায় সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নে মূলধনি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। বিজনেস-টু-বিজনেস এবং বিজনেস-টু-কনজিউমার উভয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান তথ্য কর্মকর্তাদের (সিআইও) জন্য তথ্যপ্রযুক্তিতে মূলধনি বিনিয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল ব্যবসা খাতে সফলতার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। বিশেষ করে, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এআই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠান পাবলিক কিংবা প্রাইভেট খাতের হোক না কেন, এআইয়ের সহায়তায় ব্যবসা মডেল ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই। এআই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। যদিও বিভিন্ন ব্যবসা ও উত্পাদনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এআই ব্যবহারের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার বাজার বেড়েছে। এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যয় এখন নির্দিষ্ট অনুষঙ্গে সীমাবদ্ধ নেই। ব্যয়সংকোচন ও উদ্ভাবন বাড়াতে ক্লাউড সেবায় আপগ্রেড এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।