প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চীনে আবার গাড়ি নির্মাণ কারখানাগুলো খুলতে শুরু করেছে। বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সাংহাইয়ের আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট কার গিবস। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ব্যবসা শুরু করার জন্য স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
টয়োটা মোটর কর্পোরেশন জানিয়েছে, সোমবার তাদের দুটি কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে যথারীতি দুই শিফটে কাজ চলছে। ভক্সওয়াগন এজি, ফোর্ড মোটর করপোরেশন, মার্সিডিজ বেঞ্চ, চীনা ব্র্যান্ড গিলি তাদের কারখানা চালু করেছে গত সপ্তাহেই। শনিবার খুলেছে জেনারেলস মোটর। চলতি সপ্তাহে কারখানার পুনরায় চালুর কথা ভাবছে নিসান।
গাড়ি প্রস্তুতকারকরা বলছেন, কারখানায় পুনরায় কাজের সুযোগ দিতে তারা কর্মীদের ভাইরাস চেক করিয়ে নিচ্ছেন। যারা উহান থেকে এসেছেন তাদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কারখানায় সবধরনের আগন্তুকদের প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে।
এর আগে উহানে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে নববর্ষের ছুটি বর্ধিত করে চীন সরকার। এর ফলে অফিস ও কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়িতে থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়।
করোনাভাইরাস যেন সুস্থদের আক্রমণ না করে সেজন্য চীনা সরকার নির্দেশনা জারি করে বলে, যারা বাড়িতে থেকে কাজ করতে সক্ষম তাদের বাড়িতে থেকে কাজ করতে হবে। এছাড়া সন্দেহভাজনদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়।
তবে চীনের যেসব কারখানাগুলো বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন, খেলনা এবং অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করে তাদের কারখানায় থেকে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য এসব কারখানা পুনরায় খুলে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার।
এদিকে কারখানা খোলা শুরু হলেও তীব্র কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হলেও তারা আসতে চাচ্ছেন না। গিবস বলেছেন, ‘শ্রমিকরা কর্মে ফিরে না এলে বিশ্বে এসব চীনা পণ্য সরবরাহে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।’
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউবিএস’র এক পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বের গাড়ির যন্ত্রাংশের ৮ শতাংশ যোগান দেয় চীন।
জিএম, টয়োটাসহ অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, চীনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান (কয়েক হাজার) থেকে যত বেশি এসব যন্ত্রাংশ সাপ্লাই পাওয়া যাবে, তাদের গাড়ি উৎপাদনের গতি তত বাড়বে। এখন তারা কত দ্রুত এসব যন্ত্রাংশ সাপ্লাই দিতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে করোনাভাইরাসে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। দেশটিতে আজ আরও ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮০৭ জন। সবমিলিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮৬৮ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ হাজার ৩৫৫ জন।
মঙ্গলবার চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হুবেই প্রদেশে করোনভাইরাসে আরও ৯৩ জন লোক মারা গেছে। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬৮ জনে।
চীনে মোট মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৮৬৩ জন। হংকং, তাইওয়ান, জাপান, ফিলিপাইন এবং ফ্রান্সে প্রতি একজনের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৮৬৮ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, হুবেই ৪১ হাজার ৯৯৫ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার ১৮৩ জন গুরুতর অসুস্থ। ৮৬৬২ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত ২৮টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু।