প্রযুক্তি নির্ভর আগামীর বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ। তরুণ প্রজন্মকে প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী করতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো জাতীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। এবারের প্রতিযোগিতায় ১৫০ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রযুক্তিখাতের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জানালেন, আগামী ১লা মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন রপ্তানি করবে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরো এগিয়ে নিয়ে দায়িত্ব নিতে হবে তরুণ এসব প্রোগ্রামারদেরই।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রোগ্রামিং; যা দিয়ে তৈরি করা হয় সফটওয়্যার। জটিল নানা সমস্যা সমাধানে সফটওয়্যারের মাধ্যমেই কম্পিউটারকে দেয়া হয় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা।
প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে সাইবার হুমকি’সহ প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। সমস্যা সমাধানে চলছে বিস্তর গবেষণা। নবীন সদস্য হিসেবে প্রযুক্তির মহাসড়ক থেকে ছিটকে পড়তে চায় না বাংলাদেশও। সমসাময়িক কিংবা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিতে ১৯৯৮ সাল থেকেই প্রস্তুত করা হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মকে।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে আয়োজন করা হয় জাতীয় কলজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০২০। যেখানে ৭৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫০টি টিম চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত হয়। তাদের সামনে দেয়া হয় ১১টি সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জ।
এনসিপিসি-২০২০ এর আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই বছর মোট ৭৮টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩১৭টি টিম রেজিস্ট্রেশন করেছিল। সেখানে থেকে জার্জ প্যানেলের মাধ্যমে ১৫০টি টিম সিলেক্ট করা হয়েছে। পূর্বে কোথায় কোথায় তারা কাজ করেছিলে সেটা বিবেচনায় তাদের সিলেকশন করা হয়েছে। এখানে প্রায় ১০৬ জন ছাত্রী অংশ গ্রহণ করেছে। তাই ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করার জন্য, এবছর আমরা পুরষ্কারের বড় রেখেছি। প্রথম পুরস্কার ২ লাখ টাকা। এবং দ্বিতীয় পুরস্কার ১ লাখ টাকা। এর মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে আগামী বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি ইভেন্টের হোস্ট করবে বাংলাদেশ। সেই জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করছি।
এনসিপিসি-২০২০ এর প্রধান বিচারক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, আমি আশার করি সরকার আমাদের তরুণদের উৎসাহিত করা জন্য নানা রকম প্রণোদনা দিবে। যেটা তাদের উৎসাহিত করবে যেকোন প্রতিযোগিতা ভালো করতে। আমরা যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তাহলে আমাদের নিজেদের সেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
এক শিক্ষার্থী বলেন, আজকে আমাদের ১১ টা সমস্যা ছিল। এর মধ্যে আমরা ৮টা সমাধান করতে পেরেছি। তাই টিম হিসেবে প্যাকটিস করতেছি।
সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় পরীক্ষা, চলে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরাই পাবেন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ। তাই চেষ্টার কমতি ছিলো না বলে জানালেন অংশ নেয়া প্রোগ্রামাররা।
বিকেলে মাল্টি পারপাস হলে ঘোষণা দেয়া হয় বিজয়ীদের নাম। এ বছর বুয়েটকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এনসিপিসি’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক মেজর জেনারেল মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এখন তোমাদের সময়। তোমরা চেষ্টা চালিয়ে যাও। এনসিপিসি গর্বিত, এই আয়োজন করে।
এর আগে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রযুক্তিখাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে স্কুল পর্যায় থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখানো হলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তৃণমূলে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার কথা জানালেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপন করছি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রোবট, ইন্টানেট চিন্তাসহ নানা ধরণের বিষয় নিয়ে কাজ করবে। আবার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগ ডাটা ও অ্যানালিটিক্যাল ল্যাব স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে আমরা সহযোগিতা প্রদান করছি। এবং আগামী ১লা মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন রপ্তানি করবে বাংলাদেশ।
২০২১ সালে প্রথমবারের মতো প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিশ্ব আসর ‘ইন্টারন্যাশনাল কলজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট’ আয়োজন করবে বাংলাদেশ।