প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রভাবে বৈশ্বিক মোবাইলের কেন্দ্রবিন্দু চীনে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ আছে। কিছু চালু হলেও তাতে শ্রমিক উপস্থিতি কম থাকায় উৎপাদন বিঘ্ন ঘটছে। ফলে চীনভিত্তিক মোবাইল ফোন ও তথ্য-প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে উত্তাপ লেগেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। মোবাইল ফোনের দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকার মোবাইল ফোনের বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীর মোতালিব প্লাজায় ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী মোবাইল ফোন স্টক করা শুরু করে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে যায়। যার প্রভাব পড়েছে দামে। রাজধানীর মহাখালীর টেকনো গ্রিন মোবাইলের স্বত্বাধিকারী রবিউল আলম পলাশ বলেন, ‘আমরা খুচরা পর্যায়ে চীনা কয়েকটি ব্র্যান্ডের পণ্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেশিতে কিনেছি।’ তবে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা দোকানে দাম বাড়লেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নিজস্ব আউটলেটগুলোতে এখনো দাম খুব একটা বাড়েনি বলে জানালেন ট্রানশান হোল্ডিংস বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক। তিনি জানান, ‘কারো কারো হাতে আগের যন্ত্রাংশ স্টক ছিল। তবে আগামী মাস থেকেই পণ্যের সরবরাহ কমা শুরু হবে। এখনো পর্যন্ত চীনের মোবাইল কারখানা বন্ধ আছে। কোনো কিছু আসছে না। মার্চের মধ্যে যদি এই সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হবে।’ দেশের বাজারে তাদের ব্র্যান্ড টেকনো এবং আইটেল মোবাইলের দাম এখনো বাড়ানো হয়নি বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর দেশে তিন কোটি ২৮ লাখ মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। এর মধ্যে স্মার্টফোন ৭৬ লাখ আট হাজার, ফিচার ফোন দুই কোটি ৫১ লাখ। এগুলোর মধ্যে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত ছিল এক কোটি ৪২ লাখ, আমদানীকৃত এক কোটি ২৫ লাখ, অবৈধভাবে বাজারে প্রবেশ করা ৬২ লাখ সেট।
এদিকে মোতালিব প্লাজাসহ কয়েকটি বাজারে চীনা ব্র্যান্ডের কিছু মোবাইলের দাম ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোবাইল ফোনের কভার আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। হেডফোনের দামও ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোবাইল গ্লাস প্রটেক্টরের দাম আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা হলেও এখন দাম বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে।
মোবাইল হ্যান্ডসেট ও মোবাইল অ্যাকসেসরিজ বিক্রেতা সাগর জানান, চীন থেকে আসা সব ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেট, অ্যাকসেসরিজের দাম বেড়ে গেছে। সপ্তাহখানেক আগেও রেডমি নোট-৮ মডেলের হ্যান্ডসেট বিক্রি করতাম ১৪ হাজার ৫০০ টাকা, এখন আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ১৬ হাজার টাকায়। অথচ এই সেটের দাম আরো কমার কথা। শুধু মোবাইল ফোনই নয়, করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে সব ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীর ইলেকট্রনিকস মার্কেটগুলোতে। তবে দেশে স্যামসাং স্মার্টফোনের সংযোজনকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন জানান, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কোনো সমস্যা দেখছি না। চায়নিজ নিউ ইয়ারের কারণে আমরা পর্যাপ্ত স্টক নিয়ে এসেছিলাম।’