চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ মে পর্যন্ত ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। গত মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির ওপর আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা শিথিলের লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। খবর রয়টার্স।
বিশ্বের বৃহৎ টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা ও দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের ওপর গত বছর মে মাসে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ। একই সময় নিজেদের সরঞ্জাম দিয়ে মার্কিন নাগরিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানটিকে যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পরই সাময়িকভাবে পিছু হটার পরিকল্পনা নেয় মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব গ্রাহক ও কোম্পানি হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার করছে, তাদের নিরাপদ বিকল্প খুঁজে নেয়ার সময় দিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে হুয়াওয়েকে ৯০ দিনের একটি অস্থায়ী লাইসেন্স দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কয়েক ধাপে প্রতিষ্ঠানটির ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়।
গত বছর মে মাসে গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কায় দেশের বাইরের ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির তৈরি টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম ক্রয়, সংযোজন অথবা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আদেশটিতে হুয়াওয়ের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা না হলেও ওই নির্বাহী আদেশের লক্ষ্য ছিল চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি, যা কয়েক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই আদেশবলে হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। যে কারণে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সরঞ্জাম ও অন্যান্য উপকরণ ক্রয় করা হুয়াওয়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে লাইসেন্স ব্যতীত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোরও হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার পথ বন্ধ হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহক ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় স্বার্থ বিবেচনা করে বিদ্যমান নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় হুয়াওয়েকে একটি সাময়িক সাধারণ লাইসেন্স দিয়েছিল মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই লাইসেন্স প্রদানের পরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের তৈরি সরঞ্জাম ও উপকরণ ক্রয় করার সুবিধা পায় হুয়াওয়ে। গত বছর মে মাসে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে এখন পর্যন্ত অস্থায়ী লাইসেন্স দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে হুয়াওয়ে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহারকারী মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সাময়িক এ লাইসেন্সের সম্ভাব্য সুবিধাভোগী হচ্ছে ইয়োমিং ও পূর্বাঞ্চলীয় ওরেগনের মতো স্বল্প জনগোষ্ঠীর অঞ্চলে ইন্টারনেট এবং সেলফোন সেবাদাতা কোম্পানিগুলো। এসব অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হুয়াওয়ে থেকে নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, হুয়াওয়ের তৈরি স্মার্টফোন ও নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে চীন। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। এ অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে চীন আরো কঠোর সুর উচ্চারণ করার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করে।
২০১৮ সালে হুয়াওয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো থেকে ৭ হাজার কোটি ডলারের টেলিযোগাযোগ উপকরণ কিনেছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার কোয়ালকম, ইন্টেল করপোরেশন ও মাইক্রন টেকনোলজি ইনকরপোরেশনের মতো মার্কিন কোম্পানির পণ্য ক্রয়ে ব্যয় করে প্রতিষ্ঠানটি। আগে থেকে ব্যবসা থাকলেও হুয়াওয়ের জন্য মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লাইসেন্স ইস্যু করলে মার্কিন সরবরাহকারীদেরও কোম্পানিটির সঙ্গে নতুন ব্যবসা করতে পৃথকভাবে লাইসেন্স নিতে হচ্ছে। এ ধরনের লাইসেন্স পাওয়ার কাজটি বেশ কঠিন।