আইফোন নির্মাতা অ্যাপল ফ্রান্সের প্রতিযোগিতা নজরদারি কর্তৃপক্ষের জরিমানার মুখে পড়তে পারে। ইউরোপের দেশটিতে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন ও প্রতিযোগিতা বিরোধী আচরণের কারণে জরিমানা করা হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট দুই সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে রয়টার্স।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আগামী সোমবার জরিমানার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মিলতে পারে। ইউরোপের অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইট পলিটিকো আগের এক প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে দেশটিতে কী পরিমাণ জরিমানার মুখে পড়তে পারে অ্যাপল তা প্রকাশ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ফরাসি প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষেরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইসাবেলা ডি সিলভা ফরাসি প্রতিযোগিতা নজরদারি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর গত বছর ডিসেম্বরে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন নিয়ন্ত্রিত সার্চ জায়ান্ট গুগলকে ১৫ কোটি ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল। বিবৃতিতে ওই সময় প্রতিযোগিতা নজরদারি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ফ্রান্সে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন এবং অস্পষ্ট বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে এ জরিমানা করা হয়েছে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে গুগল যে কৌশল অবলম্বন করছিল, তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল ফরাসি প্রতিযোগিতা নজরদারি কর্তৃপক্ষ। টেকসংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপন খাতে গুগলের একক আধিপত্যের কারণে তুলনামূলক ছোট ফরাসি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবসা কৌশল পরিবর্তন করার জন্য অনেকবার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি গুগল। যে কারণে গুগলকে জরিমানা করা হয়েছিল।
অ্যাপলের পক্ষ থেকে ফরাসি প্রতিযোগিতা নজরদারি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। অ্যাপল ফ্রান্সের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ফ্রান্সের আইন মেনেই পণ্য বিক্রয় ও বিপণন কৌশল ঠিক করেছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কাজেই ফ্রান্সের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরবর্তী সময়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত আদালতে মোকাবেলা করা হবে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ফরাসি ভোক্তা অধিকার নজরদারি প্রতিষ্ঠান ডিজিসিসিআরএফ জানিয়েছে, আইফোন ব্যবহারকারীদের না জানিয়ে সফটওয়্যার হালনাগাদ সরবরাহ করায় অনেক ডিভাইসের গতি হ্রাস পেয়েছে। অনেক আইফোন স্বাভাবিকভাবে কাজ করার সক্ষমতা হারিয়েছে। অ্যাপল মূলত নতুন আইফোনের বিক্রি বাড়ানোর জন্য কৌশলে সফটওয়্যার হালনাগাদ সরবরাহ করে পুরনো ডিভাইসগুলোর গতি কমিয়েছে। এমন একটি মামলার নিষ্পত্তির জন্য ভুক্তভোগী আইফোন ব্যবহারকারীদের ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মতি জানিয়েছে অ্যাপল।
শুধু ফ্রান্সেই নয়; বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল নতুন আইফোনের বিক্রি বাড়াতে ইচ্ছা করে পুরনো মডেলগুলোর গতি কমিয়ে দিয়ে আসছিল। ব্যবহারকারীদের না জানিয়ে পুরনো আইফোনের গতি কমিয়ে দেয়ায় বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশে মামলার রায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাও করা হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি ক্ল্যাস অ্যাকশন মামলার নিষ্পত্তির জন্য ভুক্তভোগী আইফোন ব্যবহারকারীদের প্রত্যেককে ২৫ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মতি জানিয়েছে অ্যাপল। আদালতের নথি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ভুক্তভোগী আইফোন ব্যবহারকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে কমপক্ষে ৩১ থেকে ৫০ কোটি ডলার গুনতে হতে পারে।
২০১৭ সালে প্রথম অ্যাপলের বিরুদ্ধে পুরনো আইফোনের গতি কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় অসংখ্য ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছিলেন, নতুন আইফোন উন্মোচনের পর পুরনো মডেলগুলোর কার্যকারিতা আকস্মিকভাবে কমে যায়। ডিভাইসগুলো আর স্বাভাবিকভাবে ব্যবহারের পর্যায়ে থাকে না।
বিশ্বব্যাপী অসংখ্য ব্যবহারকারীর অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে অ্যাপল জানিয়েছিল, তারা ইচ্ছা করে কিছু পুরনো মডেলের আইফোনের গতি কমিয়ে দিয়েছে। তবে এর পেছনে কোনো অবৈধ ব্যবসায় সুবিধা নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে দাবি জানায়, পুরনো আইফোনের আয়ুষ্কাল বাড়াতে তারা গতি কমিয়েছে। তবে অ্যাপলের এমন দাবি খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি ব্যবহারকারীদের কাছে। বিশ্বব্যাপী অসংখ্য পুরনো মডেলের আইফোন ব্যবহারকারী আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং মামলা দায়ের করে।