চীনে ফক্সকনের স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানাগুলো দ্রুত স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। অন্যান্য শিল্পের মতো স্মার্টফোন উৎপাদন শিল্পেরও কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। আমরা চীনে স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানাগুলোর কর্মীদের অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠাতে বাধ্য হই। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরেছে। কর্মীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দিচ্ছেন। চীনে স্থাপিত স্মার্টফোন কারখানাগুলোর কার্যক্রম প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরছে বলে জানান ফক্সকনের প্রতিষ্ঠাতা টেরি গো।
তাইওয়ানভিত্তিক ফক্সকন বিশ্বের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক ইলেকট্রনিকস নির্মাতা। অ্যাপলের প্রধান চুক্তিভিত্তিক পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির সিংহভাগ উৎপাদন কারখানা চীনে অবস্থিত। এর সরবরাহকারীদেরও বেশির ভাগই চীনে অবস্থিত। চীনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ভয়াবহ রূপ নিলে বাধ্য হয়ে উৎপাদন কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্মীদের ছুটিতে পাঠানো হয়। তাইওয়ানের কর্মীদের চীনে ফিরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
টেরি গো তাইপেতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের চীনের কারখানার কর্মীরা কাজে যোগ দিচ্ছেন। যে কারণে উৎপাদন কারখানাগুলোর কার্যক্রম প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরছে। পাশাপাশি চীন ও ভিয়েতনামে ফক্সকনের কারখানায় সরঞ্জাম সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, উৎপাদন স্বাভাবিক হলেও করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক মোবাইল ডিভাইস বাজারে। কারণ করোনাভাইরাস আতঙ্কে ডিভাইস বাজারে চাহিদা কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস সংক্রমণকে এরই মধ্যে মহামারী রোগ ঘোষণা করেছে। মোবাইল ডিভাইসের গুরুত্বপূর্ণ দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে করোনাভাইরাসের তীব্র প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরলেও ভোক্তারা প্রযুক্তি পণ্যে ব্যয় বন্ধ করলে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আইফোন নির্মাতা অ্যাপল ফক্সকনের প্রধান গ্রাহক। চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আইফোন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত মাসের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয়ের যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, তা পূরণ সম্ভব হবে না। কারণ আইফোন উৎপাদনের জন্য তারা এখনো শতভাগ ফক্সকনের ওপর নির্ভরশীল।
অ্যাপলের বিবৃতিতে জানানো হয়, চীনভিত্তিক ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের প্রভাব অ্যাপলের আইফোন ব্যবসা বিভাগের ওপরও পড়ছে। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চীনে আইফোনের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তাদের আগাম পূর্বাভাসের তুলনায় রাজস্ব আয় অনেকাংশে কম হবে। প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করে নেয় তাদের আইফোন উৎপাদন ও বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী আইফোন সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যাপল প্রথম কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যা চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার বিষয় স্বীকার করে নেয়। দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আইফোন উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। অ্যাপল জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ৪ কোটি ১০ লাখ ইউনিট আইফোন উৎপাদনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তা পূরণ সম্ভব হবে না। কারণ ফক্সকনের কারখানায় টানা কয়েক সপ্তাহ আইফোন উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। উৎপাদন বিভ্রাটের কারণে সরবরাহ ও বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
চীনে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে অ্যাপল প্রথমে দেশটিতে নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ স্টোর বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে দেশটিতে অ্যাপলের সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সময় কর্মীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দেশটিতে নিজেদের সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেছে অ্যাপল।