স্মার্টফোন থেকে নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ হতে পারে, বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে এমন নিশ্চয়তা মেলার পর জীবাণুমুক্ত করার একটি সময়সীমাও জানা গেছে। ডাক্তাররা বলছেন, প্রতি ৯০ মিনিট অন্তর অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ফোন জীবাণুমুক্ত করা উচিত।
দিল্লির ফোর্টিস এসকর্টস হাসপাতালের প্রধান রবি শেখর ঝা আইএএনএসকে বলেন, প্রচলিত স্প্রিট দিয়ে ফোন জীবাণুমুক্ত করা সবচেয়ে ভালো উপায়। এটি ছাড়া অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
যারা বেশি ব্যস্ত থাকেন, তারা ৯০ মিনিট পরপর ফোন জীবাণুমুক্ত করতে না পারলে দিনে কমপক্ষে দুইবার করতে পারেন।
ইনস্যুরেন্স টুগো নামের একটি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ২০ জন ব্যবহারকারীর মধ্যে মাত্র একজন ফোন পরিষ্কার করেন; তাও ছয় মাসে একবার! নভেল করোনাভাইরাসের দিনগুলোতে এই অভ্যাস খুব বিপজ্জনক হতে পারে।
জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জার্মানির গবেষকেরা জানিয়েছেন, মোবাইলে করোনাভাইরাসের জীবাণু কয়েক দিন বেঁচে থাকে।
এ গবেষণাকে আমলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) জানিয়েছে, কপার জাতীয় পদার্থের ওপর কভিড-১৯ ভাইরাসটি চার দিন বেঁচে থাকতে পারে! তিন দিন থাকে প্লাস্টিক এবং স্টেইনলেস স্টিলের ওপর।
এ দুটি গবেষণা থেকে বোঝা যায় মোবাইল নভেল করোনাভাইরাসের বেশ ‘প্রিয়’ জায়গা। কেননা শক্ত কাগজে এটি এক দিনের বেশি বাঁচতে পারে না। বাতাসেও তার সুবিধা হয় না, এখানে টিকতে পারে তিন থেকে চার ঘণ্টা। সেখানে প্লাস্টিক, স্টিল, কপারে কয়েক দিন!
মোবাইল থেকে করোনা যেন আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য সৌদি আরবের প্রাইম হাসপাতালের চিকিৎসক শ্যাম রাজমোহন গালফ নিউজের সঙ্গে আলাপকালে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, ‘মোবাইল অন্যের কাছে দেওয়া যাবে না। যখন একাধিক মানুষ ফোনটি ব্যবহার করবেন, তখন সতর্ক হতে হবে। কোনো কাপড়ে উদ্বায়ী পদার্থের পরিষ্কারক লাগিয়ে মালিশ করা যেতে পারে।’
অনেকেই দিনে গড়ে শতবারের বেশি মোবাইল স্পর্শ করেন। করোনাভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতে সাধারণ স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মানতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ভালো করে হাত ধোয়া। পারলে হালকা গরম পানি ও সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া। বারবার মুখে হাত দেওয়া যাবে না। যেসব জিনিস নিয়মিত স্পর্শ করা হয়, তা জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। টয়লেটে কোনোভাবেই ফোন নেওয়া যাবে না।
ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ও স্যামসাং কর্তৃপক্ষ ফোন পরিষ্কারের ক্ষেত্রে কোনো ডিটারজেন্ট, অ্যালকোহল বা অ্যামোনিয়াভিত্তিক পরিষ্কারকদ্রব্য ব্যবহার করতে নিষেধ করে। অ্যাপল জানায়, অ্যারোসল স্প্রে ও ব্লিচের ক্ষেত্রে এখনো এ সমস্যা হতে পারে। তবে অ্যাপলের সাপোর্ট পেজ বেশকিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সেখানে নতুন একটি বিভাগ যুক্ত করে কীভাবে অ্যাপল পণ্য পরিষ্কার করতে হবে, এর দিকনির্দেশনা দিয়েছে। অ্যাপলের প্রকাশ করা ওই নোট অনুযায়ী, অ্যাপল পণ্য ব্যবহারকারীরা তাদের আইফোনে ‘ক্লোরক্স ডিসইনফেকটিং ওয়াইপস’ বা একই ধরনের পণ্য ব্যবহার করতে পারেন।
স্যামসাংয়ের ক্ষেত্রেও ভেজা কাপড় ও হালকা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ফোন পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। তবে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। অনেক দোকানেই ফোন ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রবান্ধব স্যানিটাইজার বিক্রি করা হয়। ফোন জীবাণুমুক্ত রাখতে এসব পণ্যেও ভরসা রাখা যায়।