বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটির সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্ত বাড়ছে। বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চল ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে লকডাউনে রয়েছে। অনলাইন গেম টানা লকডাউনে থাকার বিরক্তিকর সময় কাটাতে সহায়ক হবে। বাস্তবিক অর্থেও লকডাউনের কারণে বিশ্বজুড়ে অনলাইন গেম খেলা বেড়েছে। খবর এএফপি।
গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে লা লিগার ম্যাচ বাতিল ঘোষণার পর যখন দুজন স্প্যানিশ ফুটবলার ফিফা ২০-এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন, তখন ওই দৃশ্য একটি স্টেডিয়াম আকারের ভার্চুয়াল দর্শক অনলাইনে দেখেছিলেন। এ বিশাল ডিজিটাল ভিড় ডিজিটাল গেমিং শিল্পের জন্য একটি সম্ভাবনার অংশ। কারণ বাস্তব বিশ্বের সঙ্গে একটি বৃহত্সংখ্যক মানুষ আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিনোদন ও বন্ধুত্বের জন্য রেকর্ডসংখ্যক মানুষ অনলাইনের নানা প্লাটফর্মের দ্বারস্থ হচ্ছে।
জনপ্রিয় ভিডিও গেম স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম টুইচে প্রচারিত সেভিলার বিপক্ষে রিয়েল বেটিক্সের স্ট্রাইকার বোরজা ইগলেসিয়াস তার নিজস্ব ডিজিটাল সদৃশ্যতা ব্যবহার করে জয়ের লক্ষ্যে লাথি মেরেছিলেন। ঘটনাটি মূল ডার্বি নির্ধারিত একই সময়ে হয়েছিল। স্পেনের প্রিমিয়ার টুর্নামেন্টগুলো অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপের অংশ হিসেবে স্থগিত করার আগেও দেখা যায় যে দেশটির ৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তাদের ঘরে অবস্থান করছিল।
অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক তার ৬০ হাজার দর্শকের উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাদের সবাইকে বিনোদন দেয়ার জন্য এগুলো করি, যাতে আপনি বাড়িতে অবস্থান করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। যদিও এটি করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশে এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এ সংক্রমণ ঠেকাতে কয়েকটি বড় বড় শহর বর্তমানে প্রায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
গত মাসে নিজ শহর থেকে সাংহাই ফিরে আসার পর দুই সপ্তাহের জন্য চীনে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় ইয়াং অ্যানকে। তিনি বলেছিলেন, দীর্ঘদিনের জন্য একটি ছোট জায়গায় আবদ্ধ থাকায় আমার মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। এ অনলাইন গেমই আমাকে হতাশা কমাতে সাহায্য করেছে। এ সময় নিনতেন্দোর হাতে নিয়ন্ত্রিত গেম কনসোলে তিনি দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি সময় কাটানোর কথা জানান।
অনলাইন গেমের চাহিদা দ্রুত বাড়তে থাকায় ইন্টারনেট সরবরাহকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা আরো উন্নত করছে। মার্কিন টেলকো সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভ্যারাইজনের নেটওয়ার্কে গেমিং জট এক সপ্তাহের ব্যবধানের অবিশ্বাস্যভাবে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের ব্যবহারকারীদের সংখ্যা সমন্বয় করতে অগ্রসর হচ্ছে।
ওয়াইল্ড ওয়েস্ট-থিমযুক্ত অ্যাভেঞ্চার শিরোনামে ‘রেড ডেড রিডিম্পটেশন’-এর প্রকাশক রকস্টার গেমস খেলোয়াড়দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তাদের বিশ্বব্যাপী অনলাইন সার্ভারগুলোর কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার কথা বলার পরও সঠিকভাবে চালু থাকবে।
প্রতিষ্ঠানগুলো ঘরবন্দি খেলোয়াড়দের তাদের নিয়ন্ত্রকদের কাছে ধরে রাখতে অতিরিক্ত ইন গেমের ক্রিয়াকলাপের একটি রোল আউট টিজ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেম বিশেষজ্ঞ গণমাধ্যম স্টাডি প্রভাষক ক্রিশ্চান ম্যাকক্রিয়াক বলেন, অনলাইন গেমিং প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সর্বজনীন স্থান হারিয়ে গিয়েছিল, তা এ করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পুনরায় ফিরে পাওয়া যাবে।
এ সময় তিনি অনলাইন গেম পোকেমন গোর দিকে ইঙ্গিত করেন। পোকেমন গো একটি স্মার্টফোন গেম, যা ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী একটি প্রপঞ্চ তৈরি করেছিল। ওই সময় গেমটি কয়েক লাখ লোক রাস্তায় ভার্চুয়াল দানব মিকারের জন্য উদ্ধত হয়েছিল। চলতি মাসে ডেভেলপারদের দ্বারা টুইট করা হয়েছিল, যাতে ব্যবহারকারীরা বাড়িতে বসে সহজে এ গেম উপভোগ করতে পারে। ম্যাকক্রিয়াক বলেছিলেন, সারা বিশ্বের সামনে আগামীতে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দীর্ঘ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সামনে গেমগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে।
এএফপিকে তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে শিশুদের ওপর। যারা সব কাজ বন্ধ রেখে ঘরে অবস্থান করছে। এ অনলাইন গেমগুলো তাদের ওই সময় কাটানোর কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ম্যাকক্রিয়াক। শুরু থেকেই ভিডিও গেমকে দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। পুনরাবৃত্তিমূলকভাবে স্ট্রেনের ইনজুরি এবং চোখের সমস্যা হয়ে থাকে মাত্রাতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলার কারণে।