বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চল লকডাউন রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকশ কোটি মানুষ। বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে গুগল ও ফেসবুকের ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিজ্ঞাপনী রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
বৈশ্বিক ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাত এখন সার্চ জায়ান্ট গুগল ও সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উত্স হয়ে উঠেছে। রাজস্ব আয়ে খাতটিতে শীর্ষে রয়েছে গুগল ও দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ফেসবুক। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন ব্র্যান্ড এখন ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপনী ব্যয় কমিয়ে দিচ্ছে। কার্যত বিশ্বের সব মানুষ বড় ধরনের আতঙ্কের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে, যা ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্মে ব্যয় কমার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউরোপ ও আমেরিকা ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় বাজার। এখন করোনাভাইরাসের তীব্রতা ইউরোপে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। উত্পত্তিস্থল চীনের উহান শহর হলেও করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর শত শত কোটি ডলার খোয়া গেছে।
গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কোয়েন অ্যান্ড কোর ধারণা চলতি বছর গুগলের নিট রাজস্ব ১২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে, যা গত বছরের চেয়ে ২ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার কম। অন্যদিকে চলতি বছর ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাত থেকে ফেসবুকের নিট রাজস্ব ৬ হাজার ৭৮০ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার কম।
কোয়েন অ্যান্ড কোর বিশ্লেষক দলের দাবি, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাজারে চলতি বছর খারাপ সময় পার করলেও ২০২১ সালে ফেসবুকের বিজ্ঞাপনী ব্যবসা প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে। আগামী বছর প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্মের আয় ২৩ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে।
কোয়েন অ্যান্ড কোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরজুড়ে গুগলের পরিচালন আয় হবে ৫ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার এবং ফেসবুকের পরিচালন আয় হবে ৩ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার।
ব্লগ পোস্টে লাইটশেডের বিশ্লেষক রিচ গ্রিনফিল্ড বলেন, বৈশ্বিক ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাত স্মরণকালের খারাপ সময় পার করছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল প্লাটফর্মের বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বিজ্ঞাপনী ব্যয় কমিয়ে ফেলেছেন। শুধু ডিজিটাল প্লাটফর্মেই নয়; টেলিভিশনের পাশাপাশি প্রিন্ট মিডিয়াতেও বিজ্ঞাপনী ব্যয় কমে গেছে।
বৈশ্বিক ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাত থেকে রাজস্ব আয়ে গুগল ও ফেসবুকের পরই রয়েছে ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের বিজ্ঞাপন ব্যবসা বিভাগের রাজস্ব নিয়ে খুব কম তথ্য প্রকাশ করে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের কারণে বিজ্ঞাপনী আয়ে তুলনামূলক কম প্রভাব পড়বে অ্যামাজনে।
বিবৃতিতে ফেসবুক জানায়, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে অবরুদ্ধ থাকায় আগের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি সময় ব্যয় করছে সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মটিতে। এছাড়া ঘরবন্দি মানুষের যোগাযোগেরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফেসবুক মেসেঞ্জার। এর পরও প্লাটফর্মটিতে বিজ্ঞাপন দেয়ার হার কমেছে।