নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ঠেকাতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে। লকডাউন শেষে ভারতে স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কারখানার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে বিপত্তির মুখে পড়বে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে অনেক কারখানা কর্মী লকডাউন শেষ হলেও কাজে যোগ দেবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের এক প্রতিবেদনে এমন সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। খবর ইটি টেলিকম।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, উত্তর ভারতে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং এবং চীনভিত্তিক অপো ও ভিভোর স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা অবস্থিত। লকডাউনের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো ভারত। মানুষ কার্যত গৃহবন্দি। আগে থেকেই চাপের মুখে থাকা ভারতীয় অর্থনীতি এখন রীতিমতো ধুঁকছে। ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ শুনিয়েছে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ভারতে কারখানার কার্যক্রম সাময়িক গুটিয়ে নিয়েছে স্যামসাং, অপো ও ভিভোর মতো একাধিক ব্র্যান্ড। এর ফলে ভারতে ব্র্যান্ডগুলোর ডিভাইস উৎপাদন কারখানা এখন বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতি দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিকে আরো চাপে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিল শাহ বলেন, উত্তর প্রদেশের নয়ডাতে বৈশ্বিক একাধিক ব্র্যান্ডের নিজস্ব কারখানা রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে নয়ডা কারখানার কার্যক্রম সাময়িক গুটিয়ে নিয়েছে স্যামসাং। কারখানা কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের বাড়িতে বসে দাপ্তরিক কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অপো ও ভিভো ভারতে তাদের কারখানার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রেখেছে। এর ফলে এসব কারখানায় স্মার্টফোন উৎপাদন হচ্ছে না। শ্রমিক নন এমন কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজ করতে বলা হয়েছে। মূলত শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে লকডাউন শুরুর আগেই কারখানাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো। সাময়িকভাবে যেসব কারখানা কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, তারা লকডাউন শেষে নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ দেবেন না। ভারতে স্মার্টফোন উৎপাদন বিভ্রাটের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ আরো কয়েক বাজারে। এর ফলে স্মার্টফোনের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) পক্ষ থেকেও একই ধরনের সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। আইডিসির রিসার্চ ডিরেক্টর নভকেন্দর সিং বলেন, লকডাউনের কারণে ভারতে যেসব ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলো পুরোদমে চালু হতে বেশ সময় লাগবে। কারণ লকডাউন শেষ হলেও অনেক কর্মী কাজে যোগ দেবেন না। অনেকে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। এছাড়া ভারতে লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি। কারণ দেশটিতে কভিড-১৯ আক্রান্ত ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, মোবাইল ডিভাইসের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন হাব চীন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দেশটিতে চুক্তিভিত্তিক বৃহৎ ফোন নির্মাতা ফক্সকনসহ অনেক ব্র্যান্ডের উৎপাদন সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দেশটিতে স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানাগুলোর কার্যক্রম এখনো শতভাগ শুরু হয়নি। একই পরিস্থিতি দেখা দেবে ভারতের ক্ষেত্রেও।
ভারতে স্মার্টফোন উৎপাদনকারী ব্র্যান্ডগুলো গত মার্চের শেষ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পর কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য এরই মধ্যে অপো ও ভিভোর পক্ষ থেকে উত্তর প্রদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই কারখানাগুলো ফের কবে উৎপাদনে ফিরবে সেটাও অনিশ্চিত।
বিবৃতিতে গত মাসের শেষ সপ্তাহে স্যামসাং জানায়, তারা সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নয়ডা কারখানার কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। কবে নাগাদ কারখানা খুলবে এটা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
স্যামসাং, অপো ও ভিভোর মতো পুনে ও চেন্নাইয়ের স্মার্টফোন কারখানা সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে নকিয়া ও এরিকসন। এছাড়া দক্ষিণ ভারতে ফক্সকন ও উইস্ট্রনের কারখানায় আইফোন উৎপাদন করে আসছিল অ্যাপল। এ দুই প্রতিষ্ঠানের কারখানাও সাময়িক বন্ধ রয়েছে।