চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফার আশা করছে স্যামসাং। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত মার্চে সমাপ্ত প্রান্তিকে পরিচালন মুনাফা এক বছর আগের চেয়ে বাড়বে, যা প্রত্যাশার চেয়ে সামান্য বেশি হবে। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ মহামারী আকার ধারণ করায় বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধিকে স্যামসাং ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।
বিবৃতিতে স্যামসাং জানায়, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের পরিচালন মুনাফা ৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন কোরিয়ান ওনে (৫২৩ কোটি ডলার) পৌঁছবে, যা গত বছরের একই সময়ের ৬ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ওনের চেয়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা ৬ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ওনে (৫০৫ কোটি ডলার) পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে বিক্রি ৫৫ ট্রিলিয়ন ওনে পৌঁছানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি।
বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় গত মাসের শেষ দিকে স্মার্টফোন বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে স্যামসাং। একই সময় বিক্রি কমার শঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে স্মার্টফোন বিক্রি কমলেও ফ্ল্যাগশিপ চিপ বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্টরা। করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছর স্মার্টফোন ও ভোক্তা ইলেকট্রনিকস বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করে প্রতিষ্ঠানটি।
গত মাসে স্যামসাংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কিম কি-নাম বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে টানা কয়েক প্রান্তিক ধরেই চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। এতে বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি করেছে নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা। আমরা বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে গ্যালাক্সি সিরিজের ডিভাইস দিয়ে অ্যাপলের আইফোনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আসছি। মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোনের উৎপাদন হাব খ্যাত চীনে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ডিভাইস উৎপাদনে বিভ্রাট সৃষ্টি হয়। এখন উৎপাদন স্বাভাবিক হলেও নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে মানুষ শৌখিন পণ্য ক্রয়ে সাবধানতা অবলম্বন করছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার সংকুচিত হলেও চিপ বাজারে চাহিদা বাড়বে। স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফার প্রায় অর্ধেকই চিপ ব্যবসা বিভাগ থেকে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে গত বছর স্যামসাংয়ের চিপ ব্যবসা বিভাগের প্রবৃদ্ধিতেও শ্লথগতি দেখা দিয়েছিল।
গত মাসে স্যামসাংয়ের মোবাইল ও নেটওয়ার্ক ব্যবসায় বিভাগের প্রেসিডেন্ট কোহ ডং-জিন বলেন, চলতি বছর স্মার্টফোন বাজার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সে সম্ভাবনা মুছে গেছে। এখন বাজারটি সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেহেতু পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। কাজেই সাধারণ স্মার্টফোন বাজার সংকুচিত হলেও ফাইভজি ডিভাইসের চাহিদা কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কভিড-১৯ আক্রান্ত কর্মী শনাক্ত হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শহর গুমিতে একটি মোবাইল ডিভাইস উৎপাদন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে স্যামসাং। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গুমিতে অবস্থিত কারখানায় কভিড-১৯ আক্রান্ত একজন কর্মী শনাক্ত হয়েছে। ওই কর্মী কারখানার যে ফ্লোরে কাজ করতেন, তাত্ক্ষণিকভাবে তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানাটির কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা বলা হলেও তা আরো দীর্ঘস্থায়ী হয়। যেসব কর্মী কভিড-১৯ আক্রান্ত কর্মীর সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের নিজেদের কোয়ারেন্টিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছিল স্যামসাং। একই সঙ্গে তারাও আক্রান্ত কিনা, তা নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
চীন থেকে মোবাইল ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রম শতভাগ স্থানান্তর করেছে স্যামসাং। দেশটিতে নিজেদের সর্বশেষ স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানার কার্যক্রম গত বছর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন স্যামসাংয়ের সিংহভাগ স্মার্টফোন উৎপাদিত হচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনামে স্থাপিত নিজস্ব কারখানায়। তবে নভেল করোনাভাইরাস ভারত ও ভিয়েতনামেও ছড়িয়ে পড়ায় স্যামসাং ডিভাইস উৎপাদন ব্যাহত হয়। স্যামসাং মোট যতসংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন উৎপাদন করে, তাতে গুমির কারখানার অবদান খুবই সামান্য। মূলত স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে গুমির কারখানায় হাই-এন্ড ফোন উৎপাদন করে আসছে স্যামসাং।