বৈশ্বিক স্মার্টফোন মেমোরি চিপ বাজার কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে। গত বছরও একই ধারা অব্যাহত ছিল। গত বছর বাজারটির সম্মিলিত মূল্য বা আকার কিছুটা কমে ৩ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছিল। চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিক হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় বাজারটির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর টেলিকম লিড।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘স্যামসাং মেমোরি’ গত বছর বৈশ্বিক স্মার্টফোন মেমোরি চিপ বাজারের মোট রাজস্বের ৪৭ শতাংশ ঘরে তুলেছে। স্যামসাং মেমোরি দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাংয়ের মেমোরি উৎপাদন বিভাগ। এছাড়া বাজারটিতে রাজস্ব আয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এসকে হাইনিক্স এবং মার্কিন কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইসের মেমোরি প্রস্তুতকারক মাইক্রোন টেকনোলজি ইনকরপোরেশন।
গত বছর স্যামসাং এনএএনডি ফ্ল্যাশ এবং ডিআরএএম উভয় মেমোরি চিপ বাজারে নিজের অবস্থান আরো দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে। স্যামসাং মেমোরি, এসকে হাইনিক্স ও মাইক্রোন টেকনোলজি মিলে বৈশ্বিক স্মার্টফোন মেমোরি চিপ বাজারের ৮৪ শতাংশ রাজস্ব ঘরে তুলেছে।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর পৃথকভাবে স্মার্টফোনের এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ বাজারে রাজস্ব কমেছে ২৯ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের মেমোরি চিপের চাহিদা কমায় রাজস্ব কমতে দেখা গেছে। এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ বাজারের ৪২ শতাংশ রাজস্ব দখলে নিয়েছে স্যামসাং মেমোরি। এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ বাজারের রাজস্বের ২২ শতাংশ দখলে নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কিওশিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ১৬ শতাংশ দখলে নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এসকে হাইনিক্স।
অন্যদিকে গত বছর ডিআরএএম স্মার্টফোন মেমোরি চিপ বাজারের রাজস্ব কমেছে ২৭ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমে যাওয়া এবং মেমোরি চিপের মূল্য নিয়ে প্রতিযোগিতার কারণে রাজস্ব কমেছে। গত বছর ডিআরএএম মেমোরি চিপ বাজারের ৫১ শতাংশ রাজস্ব দখলে নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে স্যামসাং মেমোরি। এছাড়া বাজারটির ২৯ ও ১৯ শতাংশ রাজস্ব দখলে নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এসকে হাইনিক্স ও মাইক্রোন টেকনোলজি।
চীনে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বহুজাতিক অনেক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি দেশটিতে উৎপাদন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকজুড়ে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় স্মার্টফোনের মেমোরি চিপ ও ডিসপ্লে প্যানেলের সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে মেমোরি চিপ ও ডিসপ্লে প্যানেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোনের মেমোরি চিপ ও ডিসপ্লে প্যানেলের বৃহৎ উৎপাদক দেশ চীন। দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় উৎপাদন বিভ্রাট দেখা দিয়েছিল। বৈশ্বিক মেমোরি চিপ বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্স। উভয় প্রতিষ্ঠানেরই উৎপাদন কারখানা চীনে অবস্থিত।
গত ফেব্রুয়ারিতে স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্সের বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা মেমোরি চিপ ও ডিসপ্লে প্যানেলের উৎপাদন কারখানা চালু রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব আরো ব্যাপক আকার ধারণ করলে কারখানা বন্ধ করা হয়। বৈশ্বিক বাজারে কেমন প্রভাব পড়বে তার চেয়ে বিপুলসংখ্যক কর্মীর নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেয় উভয় প্রতিষ্ঠান।
অবশ্য খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, চীনে নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা কমে গেছে। উৎপাদন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। কাজেই অনেক খাত প্রভাবিত হলেও মেমোরি চিপ উৎপাদন ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মেমোরি চিপ নির্মাতা এবং তৃতীয় বৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি এসকে হাইনিক্স এরই মধ্যে বৈশ্বিক মেমোরি চিপ বাজারের অনিশ্চয়তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে ও মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের অন্যতম চিপ সরবরাহকারী এ প্রতিষ্ঠান গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রান্তিকভিত্তিক মুনাফা আয়ের খতিয়ান প্রকাশ করেছিল।