ফিনল্যান্ডভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম নির্মাতা নকিয়া করপোরেশন টানা কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা নিয়ে বাড়তি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নকিয়ার শেয়ারের দাম সাড়ে ১২ শতাংশ বেড়েছে। আকস্মিক শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ায় নকিয়া হাতবদল হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিক্রি হয়ে যাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
নকিয়ার এক মুখপাত্র বলেন, আমরা গুজবনির্ভর কোনো আলোচনার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাজারে অনেক সময় গুজবনির্ভর আলোচনার সৃষ্টি হয়। এসব আলোচনাকে ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়ে থাকে, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
টিএমটি ফিন্যান্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার নকিয়ার শেয়ারের দাম বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। নকিয়ার বিক্রি হয়ে যাওয়ার বিষয় সামনে আসার পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বেড়েছে। টিএমটির দাবি, প্রতিদ্বন্দ্বী একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি হতে পারে নকিয়া। নকিয়া গ্রুপ কিংবা এর কোনো একটি অংশের ব্যবসা কার্যক্রম এ বিক্রয় প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে।
জানা যায়, বিক্রির বিষয়ে নকিয়া এরই মধ্যে নিয়মিত বিনিয়োগ ব্যাংকিং অংশীদার প্রতিষ্ঠান সিটিকে নিয়োগ দিয়েছে। নকিয়া হাতবদলের চুক্তিমূল্য হতে পারে ১ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার।
গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নকিয়া সম্পদ বিক্রি কিংবা একীভূতকরণের পথ খুঁজছে। এ নিয়ে পরামর্শদাতাদের সঙ্গে একত্রে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বৈশ্বিক বাজারে চীনভিত্তিক টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে ও সুইডেনভিত্তিক এরিকসনের কারণে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে নকিয়াকে। ক্রমবর্ধমান বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে কার্যক্রম জোরদার করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ পরিস্থিতিতে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেশ চাপে রয়েছে নকিয়া। টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সম্ভাব্য সম্পদ বিক্রি ও একীভূতকরণের উপায় খুঁজছে প্রতিষ্ঠানটি।
মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বিরোধ তীব্র পর্যায়ে পৌঁছেছে। উভয় দেশই পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দিতে চায়। এ প্রযুক্তি বৈশ্বিক ওয়্যারলেস যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার জানিয়েছিলেন, ফাইভজি প্রযুক্তিতে হুয়াওয়ের আধিপত্য মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোর প্রতিষ্ঠান যেমন নকিয়া ও এরিকসনে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করছে। অন্যদিকে নকিয়া তাদের কৌশলগত বিকল্পগুলো অনুসন্ধান করছে ও তাদের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কাজ করছে সম্পদ বিক্রি কিংবা একীভূতকরণ নিয়ে।
বৈশ্বিক বাজারে ফাইভজি প্রযুক্তি সরবরাহে হুয়াওয়ে ও এরিকসনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে নকিয়া। চলতি বছর টেলিযোগাযোগ বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র হবে বলে আগে সতর্ক করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৪ সালে নকিয়া নিজেদের সেলফোন ডিভাইস ব্যবসা বিভাগ মার্কিন সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেলফোন বিভাগ বিক্রির পর নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসায় গুরুত্ব আরোপ করে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে এক সময়ের আইকনিক নকিয়ার সেলফোন বিভাগ অধিগ্রহণ করেও মোবাইল হার্ডওয়্যার ব্যবসায় ভালো করতে পারেনি মাইক্রোসফট। এরই মধ্যে নকিয়ার প্রযুক্তি ও ব্র্যান্ড ব্যবহার করে সেলফোন ডিভাইস উন্মোচন করে ফিনিশ স্টার্টআপ এইচএমডি গ্লোবাল। প্রতিষ্ঠানটি নকিয়া ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড ফোন এনে ভালো সাড়া ফেলেছে। এইচএমডি গ্লোবাল নকিয়া ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন এনে দারুণ সাড়া পায়। বৈশ্বিক ফিচার ফোন বাজারের উল্লেখযোগ্য শেয়ার দখলে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।