প্রথমবারের মতো ভিন্ন সৌরজগত থেকে আমাদের সৌরমন্ডলে আসা ধূমকেতুতে ‘অস্বাভাবিক’ কিছু রাসায়নিকের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ভিন্ন জগত থেকে আসা ধূমকেতুটি রেডিও টেলিস্কোপ ও বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বিকিরণ স্ক্যান করে বিজ্ঞানীরা অস্বাভাবিক এই রাসায়নিকের অস্তিত্ব দেখতে পান।
গত বছর, ২১/বোরিসভ নামে পরিচিত এই ধূমকেতুটিকে গত বছরের শেষের দিকে আমাদের সৌরজগতের মধ্য দিয়ে উড়তে দেখা গিয়েছিল। অন্য একটি গ্রহ ব্যবস্থা থেকে এটা আন্তঃকেন্দ্র ভ্রমণে এসেছিল।
এখন গবেষকরা দেখেছেন যে এটি সম্ভবত তার সৌরজগতের একটি দূরবর্তী, শীতল অংশে গঠিত হয়েছিল, ওই সৌরজগতের মূল কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে এটার জন্ম হয়েছিল।
এটি আবিষ্কার হওয়ার পরপরই, গবেষকরা এটি স্ক্যান করে এটি কী দিয়ে তৈরি হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করেন। সে সময় ধূমকেতুটিকে আটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যরের (এএলএমএ) সাহায্যে স্ক্যান করেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেডিও টেলিস্কোপ। এটি বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বিকিরণ স্ক্যান করতে সক্ষম এবং মহাবিশ্বের অন্য কোথাও বড় এবং ছোট বস্তুর রাসায়নিক গঠন স্ক্যান করতে পারে।
পর্যবেক্ষণগুলিতে দেখা গেছে যে, ধূমকেতু থেকে গ্যাস বের হয়ে আসছিল যাতে অস্বাভাবিক পরিমাণে উচ্চ পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড ছিল। সূর্যের নিকটে যে কোনো ধূমকেতুতে যে পরিমাণ পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক বেশি রাসায়নিক ছিল এই ধূমকেতুতে। এটি সম্ভবত সৌরজগতের ধূমকেতু থেকে ২৬ গুণ বেশি হতে পারে।
সাধারণত, আমাদের সৌরজগতে ধূমকেতুগুলিতে পানি, গ্যাস ও প্রচুর পরিমানে ধূলিকণা পাওয়া যায়। তবে ২১/ বোরিসভে কার্বন মনোক্সাইড ও পানি ছিল। তবে পানির পরিমাণের চেয়ে ১দশমিক ৭ গুণ বেশি কার্বন মনোক্সাইড ছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
দৈর্ঘ্যে প্রায় দেড় থেকে দু’কিলোমিটার লম্বা এই ভিনগ্রহের অতিথি গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সূর্যের এতটাই কাছে চলে এসেছিল যে, একে সাধারণ টেলিস্কোপের সাহায্যে বা খালি চোখেও দেখা গিয়েছিল।
আদতে এই ভিন জগতের অতিথি ছিল এক খন্ড কার্বন মনোক্সাইড ও বরফের টুকরো। প্রথমবার আমাদের সৌরমন্ডলে এর খোঁজ পান ক্রিমিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানী গেনাডি বরিসভ। তখন আমাদের প্রতিবেশি ‘লাল গ্রহ’ অর্থাৎ মঙ্গলের কক্ষপথ থেকে সে ছিল বেশ কিছুটা দূরে। এরপর সেপ্টেম্বর এর ৯-১০ তারিখ রাতে জেমিনি নর্থ টেলিস্কোপ-এর মাধ্যমে ধূমকেতুটির একটি লেজ ধরা পড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চোখে। আর তখনই বোঝা যায় এটি আমাদের এই সৌরমন্ডলের কোন বস্তু নয়।
যখন থেকে এই ধূমকেতুটির হদিস মিলেছে মহাকাশে তখন থেকেই শুধু মহাকাশ বিজ্ঞানী নয় সাধারণ মানুষের মধ্যেও একে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। মহাজাগতিক বিষয়গুলির মধ্যে একে ঐতিহাসিক বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।