পড়ালেখা, বিনোদন, আড্ডা কিংবা অফিসের কাজ—সবই এখন অনলাইনের ওপর নির্ভর। মূলত করোনার জেরে কম-বেশি সবারই দৈনন্দিন রুটিন পাল্টেছে। এতে লাভ হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিরাপদে এসব কাজ সারতে পারছি আমরা। এর নেতিবাচক দিকও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। প্রতিদিন বেশ লম্বা সময় ডিজিটাল পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে আমাদের চোখ। বিশেষ করে শিশুদের চোখ।
আসক্তি মাত্রই ক্ষতিকর। বিশ্বজুড়ে মানুষ গৃহবন্দী হয়ে যাওয়ার পর ডিজিটাল ডিভাইসের উপর আরো বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে। ল্যাপটপ-স্মার্টফোনে আসক্তি যে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে, তা গবেষক ও চিকিৎসকেরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং স্মার্টফোন থেকে নির্গত আলো দীর্ঘমেয়াদি চোখের সমস্যা তৈরি।
একটানা মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে ফোনের আলো চোখের উপর খুব চাপ সৃষ্টি করে। কারণ এই আলো চোখের কর্নিয়া ও মণির মধ্য দিয়ে সরাসরি ভেতরে প্রবেশ করে। আলোর এই তীব্রতা চোখ ফিলটার করতে পারে না। ফলে রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা থেকে ‘ম্যাকুলার ডিজেনারেশন’ এই সমস্যা শুরু হয়।
বর্তমানে কম বয়সিদের মধ্যে ‘ম্যাকুলার ডিজেনারেশন’ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মোবাইলের নীল আলো। ফোনের দিকে একটানা চোখ আটকে থাকলে লাল হয়ে যায়, মনোসংযোগের অভাব দেখা যায়, মেলাটোলিন হরমোনের অভাবে ঘুমের সমস্যা তৈরি হয় এবং পুরো শরীরে ব্রণ প্রবণতা বাড়ে। শিশুর মানসিক ও শারীরিক নানা পরিবর্তন হতে থাকে। শুধু শিশুরাই নয়, বর্তমানে এমন সমস্যায় বয়স্করাও আক্রান্ত।
অনেকে আবার ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমে’ ভুগে থাকেন। দীর্ঘসময় পর্দার সামনে বসার পর আপনার চোখ ঝাপসা হওয়া, ঘাড়-মাথা ব্যথা করা এবং চোখ শুকিয়ে যাওয়া এই রোগের লক্ষণ। প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকলে এ সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক গবেষকই এ সমস্যাটিকে “একুশ শতকের এক নম্বর কাজের বিড়ম্বনা” – হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোখ থেকে দূরে রেখে মোবাইল ব্যবহার করা উচিত। চেষ্টা করুন ১২-১৫ ইঞ্চি দূরত্বে রেখে ফোন ব্যবহার করতে। ফোনের আলো খুব কম বা বেশি দুটোতেই ক্ষতি। দিনের আলোতে থাকলে ব্রাইটনেস একটু বেশি ও অন্ধকারে ব্রাইটনেস কম চোখের জন্য ভাল।