চীনভিত্তিক আলিবাবা গ্রুপ হোল্ডিং লিমিটেড ক্লাউড সেবা খাতে ব্যবসা জোরদারে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী তিন বছরে নিজেদের ক্লাউড অবকাঠামোতে এ অর্থ বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। আলিবাবার দাবি, বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যারের চাহিদা বেড়েছে। ভবিষ্যতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাউড সেবার চাহিদা আরো বাড়বে। যে কারণে ক্লাউড অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।
বিবৃতিতে বলা হয়, ক্লাউড প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সেমিকন্ডাক্টর ও অপারেটিং সিস্টেম উন্নয়নে বিনিয়োগের অর্থ ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি বড় একটি অংশ ডাটা সেন্টার অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
চীনের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাসা থেকে দাপ্তরিক কাজ করেছেন। ওই সময় থেকে এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যারের চাহিদা অনেকটা বেড়েছে। চীনের শীর্ষ ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কর্মক্ষেত্রে আলিবাবার চ্যাটিং অ্যাপ ডিংটকের চাহিদা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ ও অঞ্চল লকডাউনের কারণে ডিংটকের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে কয়েকশ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকে বাসায় থেকে অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন। অনলাইন কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় সার্ভারে চাপ বেড়েছে। যে কারণে ডিংটক অ্যাপ ব্যবহারে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেক ব্যবহারকারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে আমরা সার্ভার সক্ষমতা বাড়াতে কাজ শুরু করেছি।
আলিবাবা ক্লাউড ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রেসিডেন্ট জেফ ঝাং বলেন, কভিড-১৯ মহামারী বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। আমরা আশা করছি, নতুন বিনিয়োগের ফলে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হবে।
আলিবাবার দ্রুতবর্ধনশীল ব্যবসা বিভাগগুলোর একটি ক্লাউড প্রযুক্তি সেবা বিভাগ। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির ক্লাউড বিভাগের রাজস্ব ৬২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৭০ কোটি চাইনিজ ইউয়ানে পৌঁছেছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রথমবারের মতো আলিবাবার ক্লাউড ব্যবসা বিভাগের প্রান্তিকীয় রাজস্ব ১ হাজার কোটি ইউয়ানের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের তথ্যমতে, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে চীনের ক্লাউড বাজারের ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ আলিবাবার দখলে ছিল। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে চাহিদা বেড়েছে টেনসেন্ট ক্লাউড ও বাইদুর ক্লাউড সেবার। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠান দুটি চীনের ক্লাউড বাজারের যথাক্রমে ১৮ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর তা দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির কারণে বিভিন্ন শিল্পের মতো বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতও প্রভাবিত হয়। কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন হাব খ্যাত চীনে। তবে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীন অনেকটা সাফল্য দেখিয়েছে। দেশটিতে সব ধরনের শিল্পের কার্যক্রম এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
গত মার্চে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১০টি দেশে মাস্কসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা, যা বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশে এরই মধ্যে পৌঁছেছে।
ওই সময় বাংলাদেশে আলিবাবার অধীন প্রতিষ্ঠান দারাজের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় সহায়তা হিসেবে জ্যাক মা ফাউন্ডেশন এবং আলিবাবা ফাউন্ডেশন থেকে ১০টি মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অনুদানের বিষয়ে জ্যাক মা এক টুইটে জানিয়েছিলেন, ১৮ লাখ মাস্ক, ২ লাখ ১০ হাজার কভিড-১৯ টেস্ট কিট, ৩৬ হাজার প্রতিরক্ষামূলক পোশাক, ভেন্টিলেটর, ফোরহেড থার্মোমিটার এবং অন্যান্য চিকিৎসা ও মহামারী প্রতিরোধের সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া, লাওস, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা এ সহায়তা পাবে।
টুইটে তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী একযোগে অনুদান সরবরাহ করা সহজ কাজ নয়। তবে আমরা পর্যায়ক্রমে এ কাজ সম্পন্ন করব। এগিয়ে যাও, এশিয়া।