আপনি ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন। যাত্রাপথে ট্রেনে আপনার চোখে পড়েছে নানা অসংগতি। টিকিট চেকার কিংবা অ্যডেনডেন্সের অসাধুতা। আপনি শিকার হচ্ছেন কোনো ভোগান্তির। আপনার ইচ্ছা এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন কিংবা অভিযোগ করবেন। তাহলে আপনার যেতে হবে ট্রেনের গার্ডরুমে, সেখানে রক্ষিত একটি খাতায় অভিযোগ লিখে আসবেন। এই হলো নিয়ম।
এখন আপনার অভিযোগ যথাযথ দপ্তরে পৌঁছাল কি না, উর্ধ্বতন কেউ দেখল কি না কিংবা এই খাতায় আদপেই কেউ চোখ বোলায় কি না প্রশ্ন থেকেই যায়্।
গার্ডের কাছে থাকা অভিযোগ বইয়ে নয়, এখন থেকে যাত্রাপথে কোনো সমস্যা বা অসংগতি দেখলে অ্যাপসে অভিযোগ করতে পারবেন যাত্রীরা। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা যাবে এর মাধ্যমে। আর তা সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে।
এই ব্যবস্থার ফলে অভিযোগ ও সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং রেলসেবার মান বাড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
দেশে রেলভ্রমণের সময় টিকেট কাটা থেকে শুরু করে পুরো যাত্রায় কোনো সমস্যা কিংবা অভিযোগ জানানোর একমাত্র উপায় ছিল ট্রেন পরিচালকের (গার্ড) কাছে থাকা খাতায় গিয়ে লিখে আসা। ব্রিটিশ আমল থেকে এ ধারা চলে আসছে। এ পদ্ধতি যে আদৌ কোনো কাজে আসছে না, তা বলাই বাহুল্য। অভিযোগে অভিযোগে খাতা ভরে যায়, কিন্তু তার কোনো সুরাহা হয় না বছরের পর বছর।
মানুষ এখন ওই অকার্য্যকর ব্যবস্থার প্রতি বিমুখ। দিন বদলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং মান্ধাতা আমলের পদ্ধতির প্রতি অনাগ্রহের কারণে নতুন রেলসেবা অ্যাপস সেবা চালু করা হচ্ছে।
গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘রেল সেবা’ (Rail Sheba) অ্যাপস ইনস্টল করে সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারবেন যাত্রীরা। ‘রেল সেবার অ্যাপসে’ অভিযোগ (Compalin) নামে একটি অপশন চালু করা হয়েছে। যেখানে ঢুকে যাত্রীরা সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। আগের মতো আর অভিযোগ বা সমস্যার সমাধানে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে না ভুক্তভোগীকে।
জানা গেছে, অ্যাপসটি পুরোপুরি চালু হতে আরো কিছু কাজ বাকি আছে। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ রূপে শুরু হবে এই সেবা।
রেলওয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেল। রেলসেবা (Rail Sheba) অ্যাপসে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে অভিযোগ (Compalin) ট্যাব। সেখানে ভিডিও, ছবিসহ আপনার অভিযোগ আপলোড করা যাবে। অভিযোগ চলে যাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে।’
জানা যায়, আগের নিয়মে কোনো বিষয়ে অভিযোগ করতে চাইলে গার্ড কোচে গিয়ে যাত্রীরা তাদের পূর্ণ পরিচয় লিখে সমস্যার কথা লিখতেন। পরে গার্ড তা হেড কোয়ার্টারকে জানান। পরবর্তী সময়ে তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়- এমনই পদ্ধতি চালু রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে।
নিয়মিত রেলে চলাচল করেন এমন যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভ্রমণের সময় সিট ভাঙা, সিট হেলানো যায় না, এসি চলে না, সিট বসার অনুপযোগী, কেবিনের গেট অকেজো, পানিবিহীন ও অপরিচ্ছন্ন টয়লেট- এ রকম নানা সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। কাউকে কাউকে বাড়তি টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও গন্তব্যে যেতে হয়। এসব সমস্যা কাকে জানাবেন, এ ব্যাপারে জানেন না অধিকাংশ যাত্রী। আবার কেউ খাতায় লিখে এলে তা ঠিকভাবে মূল্যায়ন হয় না এমন অভিযোগও আছে যাত্রীদের।
অভিযোগ আছে, কেউ কোনো মতামত দিলে তার শুনানির পর তা বাস্তবায়ন হতেও সময় লাগে দীর্ঘদিন। এতে বিব্রত হন অনেকে। ফলে বিড়ম্বনার জন্য অভিযোগ করতে চান না যাত্রীরা।
অ্যাপস সেবা পুরোদমে চালু হলে এসব অভিযোগ আর থাকবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেন, ডিজিটাল সময়েও রেল চলছে ১৩০ বছর আগের ব্রিটিশ পদ্ধতিতে। খাতায় লিপিবদ্ধ করে সমস্যা জানানোর দিন ফুরিয়ে গেছে এখন। এ পদ্ধতির ডিজিটাল সংস্কারে হয়তো আগ্রহী হবেন যাত্রীরা। ট্রেনে গার্ডের কাছে রাখা অভিযোগ বইয়ে যাত্রীদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার মান্ধাতা আমলের সিস্টেম থেকে বের হয়ে আসছে রেল।
নতুন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করেন অতিরিক্ত সচিব। তিনি বলেন, এতে রেকর্ড থেকে যাবে প্রতিটি অভিযোগ এবং তা সমাধানের। সেখানে রেকর্ডিং ভিডিও এবং ছবি আপলোডের ব্যবস্থা রাখা এবং অভিযোগের ধরনের কিছু ফিচার যোগ করলে বিষয়টি আরও সহজ হবে।