আপনার মুঠোফোনে ‘বিকাশ’ লেখা নম্বর থেকে কল আসবে। বিকাশ নম্বর মানে, কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন! ফোনটি ধরার পর কুশল বিনিময় শেষে অপরপ্রান্তের সংযোগকারী আপনাকে বলবেন, ‘আপনি যে পরিচয়পত্র আর ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করে আইডিটা খুলেছিলেন, সেটির ফিঙ্গারপ্রিন্টে ঝামেলা হচ্ছে। আবার দেখতে পাচ্ছি আপনার বিকাশে অনেক টাকা আছে। আপনার আইডিটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অ্যাকাউন্টটি আপডেট করুন নতুবা টাকাগুলো সরিয়ে ফেলুন।’
আপনি ভাববেন বিকাশ থেকে ফোন করা হয়েছে। কারণ, ‘বিকাশ’ লেখা নম্বর। যে বিকাশ নম্বর থেকে আপনি নিয়মিত সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কিত খুদে বার্তা পান। এরপর আপনি ব্যস্ত হয়ে হয়তো তাঁদেরকেই বলবেন, অ্যাকাউন্টটি আপডেট করে দিতে। অথবা তাঁরাও আপনাকে আপডেট করে দেওয়ার কথা বলতে পারেন।
অ্যাকাউন্ট আপডেট করে দেওয়ার জন্য আপনার সাধারণ পরিচয় বা তথ্য জানতে চাইবেন অপর প্রান্তের সংযোগকারী। তাঁরা এতটাই ভদ্রভাবেই কথা বলবেন যে আপনি অখুশি থাকবেন না। কিংবা হয়তো আপনি শঙ্কিত হয়ে তাঁদের সব তথ্য দিয়ে দেবেন। তখন অপর প্রান্তের ব্যক্তি আপনাকে বলবেন, ‘আপনার ফোনে বিকাশ থেকে একটি কোড নম্বর গেছে। নম্বরটি আমাদেরকে বলুন। এরপরও অন্য তথ্যের দরকার হলে সেটিও দেবেন। আপনি কোড নম্বরটি সরবরাহ করলেন মানেই হলো, চূড়ান্তভাবে প্রতারণার শিকার হতে শুরু করলেন। অথচ, আপনি কিছু বুঝতেই পারলেন না। আপনার অ্যাকাউন্টের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে থাকা সব অর্থই গায়েব হয়ে যাবে।
ঠিক এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিকাশ গ্রাহকদেরকে নিয়মিত প্রতারিত করে আসছিল একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। এরকম একটি চক্রের ১৩ জনকে গতকাল রোববার গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটি গ্রেপ্তার হওয়ার পর উপর্যুক্ত প্রতারণার কৌশলটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছে। র্যাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতারণার এ কৌশলের তথ্য বিকাশের প্রধান কার্যালয় থেকেও জানা গেছে।
চক্রটির ১৩ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের প্রতারণার পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে। চক্রটি বিকাশের মাধ্যমে কয়েক বছর ধরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, চক্রটি পরিচালিত হয় মূলত ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকা থেকে। সারা দেশে চক্রের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন সদস্য রয়েছে। কয়েকটি টিমের মাধ্যমে ধাপে ধাপে চক্রটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রথমে তারা টাকার বিনিময়ে আপনার বিকাশ নম্বরটি সংগ্রহ করবে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে। সংগ্রহের কাজটি করে ‘হান্টার টিম’। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় বিকাশের নম্বর ‘স্পুফিং’ করে আপনাকে কল দেওয়া হবে, বিকাশের মতো দেখতে একটি নম্বর থেকে। যাতে আপনি অবিশ্বাস না করতে পারেন। এদেরকে ‘স্পুফিং টিম’ বা ‘নম্বর ক্লোন টিম’ও বলা হয়ে থাকে।
আপনার কাছে তাদেরকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তারা তৃতীয় ধাপে বিকাশ ‘কাস্টমার কেয়ার’-এর পরিবেশ নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। আশপাশে বিকাশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার মতো আবহ তৈরি করবেন। এদেরকে বলা হয় ‘ফেক কাস্টমার কেয়ার’। যাতে আপনি ভাবেন, তারা প্রকৃতপক্ষেই বিকাশের লোক। এরপর যখন তারা আপনার একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে, তখন চতুর্থ ধাপে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের মাধ্যমে ‘টাকা উত্তোলন’ করে থাকে। এসব ঘটনা ঘটাতে গিয়ে যাতে কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় সেজন্য ‘ওয়াচম্যান টিম’ কাজ করে থাকে। গ্রেপ্তার হওয়াদের বরাত দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া ইউংয়ের পরিচালক সারওয়ার বিন কাসেম।
মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিড-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির এ চক্রটির মোট ১৩ জনের নয়জনকে র্যাব-২ গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর মহাখালী থেকে। র্যাব-৮ বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ফরিদপুর থেকে। র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-২) মেজর এইচ এম পারভেজ আরেফিন চক্রটিকে গ্রেপ্তারের অভিযানে অংশ নেন।