সম্প্রতি চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের ওপর নতুন বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে নতুন চিপ ক্রয়াদেশ নেয়া স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) লিমিটেড। এর ফলে টিএসএমসি চিপ ক্রয়াদেশ ঘাটতির মুখে পড়েছে। তবে ক্রয়াদেশ ঘাটতি খুব দ্রুত পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে টিএসএমসি। বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের কাছে চিপ বিক্রি করতে না পারলেও খুব বেশি সংকট সৃষ্টি হবে না। গতকাল টিএসএমসির চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ গত মাসে হুয়াওয়ের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর আওতায় মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিপ উৎপাদন করে এমন অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লাইসেন্স নিতে হবে। যে কারণে হুয়াওয়ের কাছ থেকে চিপের নতুন ক্রয়াদেশ নেয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে টিএসএমসি। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নতুন নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগে হুয়াওয়ের ক্রয়াদেশকৃত চিপ, যেগুলোর উৎপাদন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে, তা নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার প্রভাবমুক্ত থাকবে। অর্থাৎ নতুন নিষেধাজ্ঞার আগে হুয়াওয়ের ক্রয়াদেশ দেয়া সব ধরনের চিপ সরবরাহ করবে টিএসএমসি। হুয়াওয়ের আগের ক্রয়াদেশকৃত চিপ আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সরবরাহ সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
টিএসএমসির হাইসিলিকন চিপের অন্যতম গ্রাহক হুয়াওয়ে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধ এবং হুয়াওয়ের পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণে চিপ ব্যবসা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে টিএসএমসিকে। কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশই টিএসএমসির ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের শীর্ষ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা টিএসএমসি। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নিজস্ব কারখানা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশটির অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে এ অ্যাডভান্সড চিপ কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। টিএসএমসির অ্যারিজোনা কারখানায় ৫-ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টার চিপ তৈরি করা হবে।
টিএসএমসি মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের এ-সিরিজের প্রসেসর চিপ তৈরি করে আসছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকে তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত এক মিটিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ যুক্তরাষ্ট্রে চিপ কারখানা নির্মাণের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
২০২৩ সালের শেষ নাগাদ টিএসএমসির অ্যারিজোনা কারখানা পূর্ণাঙ্গ রূপে চিপ উৎপাদনে যাবে। এটা নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় কারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে স্টেট কিংবা ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের আর্থিক প্রণোদনা পেতে যাচ্ছে টিএসএমসি। তবে প্রতিষ্ঠানটির যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনার সঙ্গে স্টেট ও বাণিজ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, চিপ কারখানা নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল কাজ। টিএসএমসি এরই মধ্যে তাইওয়ানের তাইনান অঞ্চলে নতুন একটি চিপ কারখানায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। কারখানাটি চলতি বছরই আইফোনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উৎপাদন শুরু করবে।
অন্যদিকে বেইজিং আগেই হুশিয়ারি দিয়েছিল হুয়াওয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন হতে দেখলে তারা বসে থাকবে না। এবার প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত বিষয়ে কঠোর হতে যাচ্ছে। পাল্টা জবাব দেয়ার অংশ হিসেবে বেইজিং একগুচ্ছ মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ‘অবিশ্বস্ত’ তালিকাভুক্ত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বাস্তবে এমন হলে তা যুক্তরাষ্ট্র-চীনের চলমান বাণিজ্য বিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
চীন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল ইনকরপোরেশনসহ সিসকো সিস্টেমস এবং কোয়ালকম ইনকরপোরেশনের মতো অন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবিশ্বস্ত তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শুধু অবিশ্বস্ত তালিকাভুক্ত করা নয়; এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে দেশটি। পাশাপাশি বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে উড়োজাহাজ ক্রয় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৈশ্বিক চিপ নির্মাতারা যাতে চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের কাছে চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ করতে না পারে, সে বিষয়ে নতুন করে ব?্যবস্থা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন করে নিয়ম পরিবর্তন হুয়াওয়ে ও তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা টিএসএমসির জন্য বড় ধরনের ধাক্কা। টিএসএমসি হুয়াওয়ের জন্য চিপ তৈরি করে থাকে, একই সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক অ্যাপল ও কোয়ালকমের চিপ উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে টিএসএমসি। কারণ চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি সিংহভাগ চিপ চীনে নির্মিত কারখানায় উৎপাদন করে আসছে। ভবিষ্যতে ব্যবসায় ঝুঁকি এড়াতে তাই যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব চিপ কারখানা নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এ বিষয়ে টিএসএমসি বা মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।