ওয়ার্ক ফ্রম হোমে বাধ সাধছে ব্রডব্যান্ডের স্পিড। কারণ এই লকডাউনের কালে বহু মানুষ ব্যবহার করছেন ব্রডব্যান্ড কানেকশন। কেউ একই প্ল্যাটফর্মে সিনেমা দেখছেন, কেউ আবার দূর-দূরান্তে নিকটজনের সঙ্গে ভিডিও কলে মগ্ন। তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে চলছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম।
কাজেই প্রত্যেক মানুষেরই ইন্টারনেটের ঠিকঠাক স্পিড পেতে অসুবিধা হচ্ছে। যাদের কাছে ফাইবার ব্রডব্যান্ড কানেকশন রয়েছে, তারা অনেকটাই সুবিধা ভোগ করছেন। কারণ, সাধারণ ফোরজি নেটওয়ার্কের তুলনায় অনেক বেশি স্পিড দেয়, ফাইবার ব্রডব্যান্ড কানেকশন।
কিন্তু সেখানেও যে গতিতে ইন্টারনেট চলার কথা, তার থেকে অনেকটাই কম হচ্ছে। অভিযোগও উঠছে বিস্তর। এই পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। জেনে নিন ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর উপায়।
প্রতিদিন ১০ মিনিট বন্ধ রাখুন রাউটার বেশ কিছু সময়ে রাউটারের স্পিড কমে যায় আমাদের অজান্তেই। রাউটারের স্পিডের কারণেই অনেক সময়ে ইন্টারনেটের সঠিক স্পিড পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে আপনি চাইলেই আপনার রাউটারের স্পিডের কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, তা ট্রাবলশুটিং উইজার্ড চালিয়ে দেখে নিতে পারেন। সেই সমস্যার সমাধানে নতুন করে রাউটারের সেটিংস আবার চালু করলে, আপনার রাউটারটি আবার পুরনো ছন্দে অনেক ভালো স্পিডেই কাজ শুরু করবে। এছাড়াও প্রতিদিন নিয়ম করে কাজে বসার আগে বা পরে অন্তত ১০ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখুন রাউটার।
রাউটারের স্থান পরিবর্তন করুন
ধরা যাক আপনার রাউটারটি রেখেছেন টিভির সামনে বা যাতে কাজ করছেন অর্থাৎ ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের সামনে, তাহলে ইন্টারনেটের সঠিক স্পিডের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা গিতে পারে। কারণ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ রাউটারের ইন্টারনেটের গতি অনেকখানিই কমিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে আপনার উচিত ঠিকঠাক এবং নিরাপদ স্থানে রাউটারটি রাখা। টিভি, ল্যাপটপ-ডেস্কটপ বা যেখানে বসে আপনি মোবাইল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, সেখান থেকে বেশ কিছুটা দূরত্বে রাখুন আপনার রাউটার।
নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অজান্তেই পাড়া-পড়শি ব্যবহার করছে আপনার ইন্টারনেট। আপনি কেন স্পিড পাচ্ছেন না ভেবে কূলকিনারা করছেন, এদিকে আপনার গোটা পাড়া ব্যবহার করছে আপনার ইন্টারনেট। সে ক্ষেত্রে নিজের রাউটারের জন্য নিরাপদ একটি পাসওয়ার্ড বাছুন। আর নিশ্চিত করুন সেই পাসওয়ার্ড যাতে ছড়িয়ে না পরে। নিরাপদ পাসওয়ার্ড সে দিক থেকে আপনার ইন্টারনেট স্পিড বাড়াতে অনেকটাই সাহায্য করবে।
ভিপিএন ব্যবহার করবেন না
কোনও সময়ে অফিসের কাজের জন্য ভিপিএন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এই ভিপিএন ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছে, এটি ইন্টারনেটের স্পিড অনেকটাই কমিয়ে দেয়। তাই কাজের ক্ষেত্রে যদি ভিপিএন ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তা ব্যবহার করতেই হবে। কোনও উপায় নেই। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রেই কোনও ভিডিও কল বা কনফারেন্সের জরুরি দরকার হলে ভিপিএন বন্ধ রেখেই তা করতে পারেন। তাতে আপনার কনফারেন্সে কোনও সমস্যা হবে না। বাড়বে ইন্টারনেটের গতি।
ল্যান ক্যাবল ইন্টারনেটের স্পিড ঠিকঠাক দেয়
রাউটারের চাইতে অনেক বেশি স্পিড দেয় ল্যান ক্যাবল। কারণ, রাউটার থেকে মোবাইল, ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ এসবের জন্য ইন্টারনেটের স্পিড ভাগাভাগি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে দ্রুত ইন্টারনেট স্পিড পাওয়ার সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে ল্যান ক্যাবল ব্যবহার করা। তবে চেষ্টা কবেন নতুন ল্যান ক্যাবল ব্যবহার করার। কারণ অতি পুরনো ল্যান ক্যাবল হলে আর এক বিপদ। তাতেও ইন্টারনেটের স্পিড খুব কম থাকে। তাই পুরনো ল্যান কেবল ব্যবহার করলে তা বদলে ফেলুন। চেষ্টা করুন, Cat-6 এবং Cat-6a LAN ক্যাবল ব্যবহার করার, তাতে আখেরে ইন্টারনেটের স্পিড পাবেন খুবই বেশি।
বুঝেশুনে ব্যবহার করুন ইন্টারনেট
আপনার রাউটারের সঙ্গে অনেক মানুষ একসঙ্গে কানেক্টেড থাকলে চাপ হওয়ার প্রভূত সমস্যা। সে ক্ষেত্রে বুঝেশুনে ইন্টারনেট ব্যবহার করুন। ধরা যাক, আপনার পরিবারে ৬ জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে হচ্ছে কেবলই আপনাকে। বাকিরা মোবাইল থেকে সিনেমা দেখছেন, বা ভিডিও কল করছেন, এমনই কতশত কাজ। সে ক্ষেত্রে আপনাকে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আপনি ব্যতিরেকে বাকিরা যাতে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাতে আখেরে মঙ্গল আপনারই। কারণ, ওয়ার্ক ফ্রম হোমই এই করোনার কালবেলায় একমাত্র ভরসা। আর অফিসের কাজের গুরুত্বও অনেক বেশি। তার সঙ্গে কোনও আপোষ করা চলে না।