ওয়ান প্লাস ৮ প্রো দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের বাজারে বিক্রি শুরু হয় ১৮ জুন। কোম্পানিটি জানিয়েছে, বিক্রি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে ডিভাইসটি সোল্ডআউট হয়ে যায়। এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন করেছিল ব্লুমবার্গ।
একই অবস্থা হয়েছে শাওমির ক্ষেত্রেও। ১৮ জুনেই ভারতের বাজারে প্রথম বিক্রি শুরু হয় শাওমির মি নোটবুক ১৪ সিরিজের। অ্যামাজনের পণ্য তালিকায় দেখা যাচ্ছে ১৯ জুনেই এটি সোল্ডআউট হয়ে গেছে।
শুধু এ দুটি ডিভাইসই নয়, গালওয়ান উপত্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জেরে ভারতজুড়ে যখন চীনা পণ্য বর্জনের ডাক উঠেছে, তখন তার কোনো প্রভাবই পড়ছে চীনা মোবাইল ডিভাইসের ব্র্যান্ডগুলোতে। বরং কিছু ডিভাইসের বিক্রি বেড়ে গেছে।
ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভারতের ইকমার্স মার্কেটপ্লেসগুলোর একাধিক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী জানিয়েছেন, চীনা স্মার্টফোন বা ইলেক্ট্রনিক পণ্য বিক্রিতে বয়কট উত্তেজনার কোনো প্রভাব পড়েনি।
যেই পশ্চিমবঙ্গে উত্তেজনার বশে চীনা প্রেসিডেন্ট ভেবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছিল সেখানেও কিন্তু চীনা স্মার্টফোনের বিক্রি বাড়ছে হু হু করে।
সেখানকার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, স্যামসাংয়ের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু অপো, ভিভো, রিয়েলমি, শাওমি, ওয়ান প্লাসের বিক্রিতে কোনো কমতি নেই। লকডাউনের আগে যেমন বিক্রি হতো, এখনও তেমনই।
এর ব্যাখ্যায় বিক্রেতারা বলছেন, দু’আড়াই মাস লকডাউনে সব বন্ধ ছিল। লকডাউন খুলতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাছাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ফোনের চাহিদাও এখন বেশি। কারণ ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনাও এখন প্রায় পুরোটাই স্মার্টফোনে চলছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় হলো, অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ক্রেতাদের মধ্যে বয়কটে সাড়া দেয়ার প্রবণতা বেশি। ছোটদের পকেটে সব চীনা ফোন। কারণ তারা যতটা কম দামে ভালো কনফিগারেশন ও ফিচার দিচ্ছে, যত ভালো ক্যামেরা দিচ্ছে, যত মসৃণ ভাবে চলছে, অন্য কোনোও সংস্থা সেই দামে তা পারছে না। তাছাড়া পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া একটা শিশুকে বাবা-মায়েরা দামি ফোন দিতে চান না। তারা ১০ হাজার রুপির ভেতরেই ফোন খোঁজেন। ওই দামে ভালো ফিচার পেতে হলে চীনা অপো, ভিভো, শাওমি ছাড়া গত্যন্তর নেই!
অবশ্য এই পরিস্থিতিতে চীনা কোম্পানিগুলো অত্যন্ত সচেতনভাবে তাদের ডিভাইসের ব্র্যান্ডগুলোতে ভারতীয় রঙ দেয়ার চেষ্টা করছে। যেমন সর্বশেষ রিয়েলমি ইন্ডিয়ার সিইও মাধব শেঠ সম্প্রতি একটি ইউটিউব সিরিজে বলেছেন, রিয়েলমি একটি ভারতীয় স্টার্টআপ, যেটি এখন বিশ্বের শীর্ষ সাতটি স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের একটি। একইভাবে পোকো ব্র্যান্ডকে ‘দিল্লি মেড’ বলে অভিহিত করেছেন পোকো ইন্ডিয়ার মহাব্যবস্থাপক সি মনমোহন।
এদিকে জনতার উত্তেজনাকে পুঁজি করে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছে ভারতীয় ব্র্যান্ড মাইক্রোম্যাক্স। আগামী মাসেই তারা ১০ হাজার রুপির নিচে দাম পড়বে এমন তিনটি স্মার্টফোন উন্মোচনের ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে ৪ হাজার ৯৯৯ রুপির একটি স্মার্টফোন উন্মোচন করেছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় জনগণের মধ্যে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক জনপ্রিয় হলেও বা সাধারণ জনগণ সত্যি সত্যিই চীনা পণ্য বর্জন শুরু করে করলেও কিন্তু বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যে ভারতের চীন নির্ভরতা এতো সহজেই মিটবে না। এক্ষেত্রে চীনা গ্যাজেটের কথা তো বলাইবাহুল্য!