করোনা মহামারী শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নিয়ে নানা পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোও লকডাউন চলাকালীন সাময়িক সময়ের জন্য কর্মীদের এমন সুযোগ দিতে বাধ্য হয়েছে।
তবে জাপানি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফুজিৎসু স্থায়ীভাবে এমন একটি ব্যবস্থার দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তারা বলছে, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব যে ‘নয়া স্বাভাবিকতার’ মধ্যে এসে পড়েছে, এই পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে তারা জাপানজুড়ে অফিসের সংখ্যা ও আয়তন অর্ধেকে নামিয়ে আনতে চায়।
ফুজিৎসু এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের ‘ওয়ার্ক লাইফ শিফট’ কর্মসূচির আওতায় দেশজুড়ে ৮০ হাজার কর্মী কাজের ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য ও অভূতপূর্ব নমনীয়তার সুযোগ পাবে। কর্মীরা তাদের সুবিধামতো সময়ে কাজ করতে পারবেন। প্রয়োজন মনে হলেই তারা বাসা থেকে অফিস করতে পারবেন।
বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা কাজের এক নতুন পদ্ধতি আনতে যাচ্ছে। এতে কর্মীদের আরো বেশি ক্ষমতায়ন হবে, উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং কর্মীদের জন্য থাকবে এক সৃজনশীল অভিজ্ঞতা যার ফলে প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টিশীলতাই ত্বরান্বিত হবে এবং গ্রাহক ও সমাজে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে।
এ পরিকল্পনার আওতায় কর্মীরা প্রাথমিকভাবে অফিসের বাইরে দূরবর্তী স্থান থেকে কাজ করতে পারবেন। কাজ, অফিসে তাদের ভূমিকা এবং জীবনযাপন পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য সুবিধামতো সময় ভাগ করে নিতে অভ্যস্ত করে তোলা হবে কর্মীদের।
কাজ করার জন্য বাসা বা বড় করপোরেট হাব অথবা স্যাটেলাইট অফিসের কোনো একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগও থাকবে। ফুজিৎসুর বিশ্বাস, কর্মীদের আরো বেশি স্বাধীনতা দিলে দলগত কাজ আরো ভালোভাবে সম্পন্ন হবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
অবশ্য ফুজিৎসুর আগে গত মে মাসেই এমন ঘোষণা দিয়েছে মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটার। টুইটার তার কর্মীদের বলেছে, কেউ চাইলে স্থায়ীভাবে বাসা থেকে কাজ করতে পারেন।
টুইটার সম্প্রতি বলেছে, গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে, বাসা থেকে কাজ করলেও কোম্পানির সার্বিক কাজের কোনো ক্ষতি হয় না। ফলে কর্মীদের কেউ যদি মনে করেন, তাদের বাসা থেকে কাজ করলেই সুবিধা হয় তাহলে তারা সেই সুযোগ নিতে পারেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে গুগল ও ফেসবুকও এমন ঘোষণা দিয়েছে। গুগল প্রথমে ১ জুন পর্যন্ত বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল। পরে তা আরো সাত মাস বাড়ানো হয়েছে। একই ঘোষণা দিয়েছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকও।
এ ব্যাপারে স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব জার্নালিজমের ভিজিটিং প্রফেসর শ্রী শ্রীনিবাসন বলেন, এটা তো নতুন যুগকে সংজ্ঞায়িত করার মতো খবর। অনেকেই হয়তো এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিবে না। কিন্তু কর্মক্ষেত্রের নমনীয়তার বিষয়ে সিলিকন ভ্যালির কাছ থেকে আমরা শিখতে পারি। এমন একটা মানসিকতা রয়েছে যে, বাসা থেকে কাজ করা হলো ফাঁকিবাজি। অফিসে সশরীরে উপস্থিত থাকাটাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হতো। সেই দিন আর নেই!
সূত্র: বিবিসি