সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট ২০১৯’ -এ টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে হুয়াওয়ে। প্রতিবেদনে সাপোর্টিং নেটওয়ার্ক স্ট্যাবিলিটি, নিরাপত্তা, নিঃসরণ হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনে নিজেদের কার্যক্রম, টেকফরঅল এর ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ও কর্ম পরকল্পনা এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিয়ে বিগত বছরগুলোতে হুয়াওয়ের সাফল্যের কথা উঠে এসেছে ।
হুয়াওয়ের অন্যতম সামাজিক দায়িত্ব ও লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে সাপোর্টিং নেটওয়ার্ক স্ট্যাবিলিটি। ভূমিকম্প, টাইফুন, সুনামি, এমনকি সশস্ত্র সংঘাতময় পরিস্থিতিতেও হুয়াওয়ের কর্মীরা সঙ্কটের মূলে থেকে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক কার্যক্রম সচল রাখতে কাজ করে। গত বছর ২শ’র বেশি সঙ্কটময় ঘটনা ও দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে নেটওয়ার্ক সচল রেখেছে হুওয়ায়ে।
এ নিয়ে হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান লিয়াং হুয়া বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমরা অভুতপূর্ব সব প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছি,। এবং আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ের ধারাবাহিকতা এবং আমাদের গ্রাহকদের সময়মতো পণ্য ও সেবাদান নিশ্চিত করতে আমরা সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে দিন-রাত কাজ করেছি। বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশে কয়েকশ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের নেটওয়ার্ক সেবা চালু করতে সহায়তা করেছি আমরা। তবে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্থিতিশীল নেটওয়ার্ক কার্যক্রম বজায় রাখাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, এটা আমাদের অন্যতম সামাজিক দায়িত্ব।’
কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, সার্কুলার ইকোনোমি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে এর স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী নানা লক্ষ্য এবং গত বছর এর সাফল্যের কথাও প্রকাশ করেছে।
নিঃসরণ হ্রাসের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে পণ্যে জ্বালানি দক্ষতা ২২ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ে ১.২৫ বিলিয়ন কিলোওয়াট-আওয়ার (কেডব্লিউএইচ) ক্লিন এনার্জি ব্যবহার করেছে, যা ৫ লাখ ৭০ হাজার টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের হ্রাসের সমান।
সার্কুলার ইকোনোমিতে অবদান রাখতে হুয়াওয়ে পণ্যের লাইফসাইকেল জুড়েই সম্পদের সর্বোচ্চ উপযোগিতার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিষ্ঠানটির কাছে পুনরায় ফিরে আসা ৮৬ শতাংশ পণ্যের পুনঃব্যবহার করা হয়েছে এবং এর ই-বর্জ্যের মাত্র ১.২৪ শতাংশ ভূমিতে পতিত হয়েছে।
এছাড়াও, হুয়াওয়ে পুনঃনবায়নে কাজ করে চলেছে। হুয়াওয়ে ক্যাম্পাসে নির্মিত ফটোভোলটেক (পিভি) প্ল্যান্টের ১৯.৩৫ মেগাওয়াট সমন্বিত ক্যাপাসিটি রয়েছে এবং ২০১৯ সালে এ প্ল্যান্ট ১৩.৫৭ মিলিয়ন কেডব্লিউএইচ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বৃহৎ পরিসরে স্মার্ট পিভি সমাধান ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আর্জেন্টিনার জুজয় প্রদেশে ৩০০ মেগাওয়াটের পিভি প্ল্যান্ট থেকে বছরে ৬৬০ মিলিয়ন কেডব্লিউএইচ বিদ্যুৎ করা হয়, যার মাধ্যমে অনায়াসে ১৬০,০০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া যাবে।
ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি জোরদারকরণে এবং সবার কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হুয়াওয়ে। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ে রুরালস্টার লাইট সল্যুশন উন্মোচন করে, যা উল্লেখ্যযোগ্যভাবে সাইট নির্মাণব্যয় কমিয়ে আনে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৪ কোটি মানুষকে যুক্ত করে। সকল ধরণের স্থান যেমন সমতল, পাহাড়ি অঞ্চল, মরুভূমি এবং দ্বীপে কানেক্টিভিটি সেবা দিবে এ সমাধান। এছাড়াও, ডিজিট্রাক মোবাইল মোবাইল ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরিতে এর অংশীদারদের সাথে কাজ করছে হুয়াওয়ে। যার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত ৮শ’র বেশি কেনিয়ার নাগরিককে ডিজিটাল স্কিল প্রশিক্ষণ সেবা দেয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে হুয়াওয়ের পূর্ব আফ্রিকায় ইউনেস্কো আঞ্চলিক অফিসের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। হুয়াওয়ে ও ইউনেস্কো ডিজিট্রাককে আরও বেশি দেশে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সকল আফ্রিকানদের কাছে ডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণ পৌঁছে দিতে কাজ করবে।
হুয়াওয়ে প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জাতিসংঘের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং মানবতার কল্যাণে একসাথে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি পুরো শিল্পখাতকে আহ্বান জানিয়েছে।
হুয়াওয়ের বোর্ড মেম্বার এবং সিএসডি কমিটির চেয়ারম্যান তাও জিংওয়েন বলেন, ‘সামগ্রিক সাফল্যের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সহযোগিতায় বিশ্বাস করে হুয়াওয়ে। একটি সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেম তৈরিতে আমরা আমাদের সাপ্লায়ার সহ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সাথে কাজ করছি। তিনি বলেন, ‘এসব প্রতিকূলতার মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমরা আত্মবিশ্বাসী এবং আমাদের গ্রাহকসহ বিস্তৃত পরিসরে বৈশ্বিক কমিউনিটিতেও অবদান রাখতে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।’
সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্ট ২০১৯ ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন: http://www.huawei.com/en/sustainability/sustainability-report