যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শিক্ষার্থী ভিসার নিয়মের বিরুদ্ধে মামলায় এবার যোগ দিয়েছে গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফটসহ ১৪ টেক কোম্পানি। গতকাল সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) করা মামলায় যোগ দেয় তারা। ‘দ্য হিন্দু’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এই আইটি সংস্থাগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা দেশের জিডিপিতে যথেষ্ট অবদান রাখেন। আন্তর্জাতিক ছাত্ররা মার্কিন ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। শিক্ষা শেষে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রেই থাকুন বা দেশেই ফিরে যান, ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে থাকেন। এসব শিক্ষার্থী বিদায় নিলে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উৎকর্ষের মান ধরে রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ঘনত্ব হারিয়ে বিপাকে পড়ে যাবে।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষা নিতে আসা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
৬ জুলাই ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) জানিয়েছে, আসন্ন ফল সেমিস্টার থেকে আমেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি পুরোপুরি অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করে, তাহলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আমেরিকা ত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া সেখানে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদেরও ভিসা দেওয়া হবে না। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী পুরোপুরি অনলাইন পড়াশোনা করছেন, তাঁদের অবিলম্বে হয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে অন্তত কিছুসংখ্যক ক্লাসে সশরীরে উপস্থিত থেকে করতে হবে অথবা দেশে ফিরে যেতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ৮ জুলাই ফেডারেল কোর্টে মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। এবার এই সিদ্ধান্তের স্থগিতাদেশ চেয়ে টেক কোম্পানিগুলো। ইউএস চেম্বার অব কমার্স এবং অন্য আইটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো বলছে, এই সিদ্ধান্ত তাদের নিয়োগের পরিকল্পনা ব্যাহত করবে, বোর্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
৮ জুলাই হার্ভার্ড-এমআইটির দায়ের মামলায় বলা হয়েছে, নতুন নির্দেশনায় লাখো শিক্ষার্থীর আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ফেডারেল আদালতে করা এ মামলার আরজিতে বলা হয়, আসন্ন ফল সেমিস্টার শুরু হওয়ার আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভার্সিটি বদল করার সুযোগ নেই। এতে অনেকেই দেশটিতে শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁদের বৈধ ভিসা হারাবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরে যাওয়া ব্যয়বহুল, অবাস্তব এবং অনিরাপদ বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
গত মার্চে আইস এক নির্দেশনায় বলেছিল, মহামারির সময় বিদেশি শিক্ষার্থীরা সশরীরে উপস্থিত না হয়েও ক্লাস করতে পারবেন এবং এ কারণে তাঁদের আমেরিকার ভিসার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে গত তিন মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের দিকে নজর রেখে ক্লাসের সময়সূচিও দেওয়া হয়ে গেছে। এখন হঠাৎ করে ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে শুধু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাই নন, বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। হার্ভার্ডসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্নাতক পর্যায়ের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে আসতে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আগামী সেমিস্টারের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। দায়ের করা মামলায় প্রশাসনিক এ সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।