আধুনিক সভ্যতার অন্যতম আবিষ্কার স্যাটেলাইট। দিন দিন বিশ্বে বৃদ্ধি পাচ্ছে স্যাটেলাইটের ব্যবহার। ঠিক একই সময়ে এসে বাংলাদেশও মহাকাশ গবেষণা এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য দেশের প্রথম স্যাটেলাইটর উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মাইলফলক তৈরি করে।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের শুরু থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত এর ব্যবহার নিয়ে নানা রকম আলোচনা ও সমালোচনা হলেও এই স্যাটেলাইটের বাস্তবিক প্রয়োগ শুরু করেছে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা। ফলে লাভবান হতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ।
ফ্রান্স ভিত্তিক স্পেস রিসার্চ সংস্থা থালাস এলিনিয়ার তৈরি স্পেসবার-৪০০০ বি-১ স্যাটেলাইট মডেল প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর জিওস্টেশনারি যোগাযোগ স্যাটেলাইট যা বাংলাদেশ ছাড়াও এই অঞ্চলে থাকা বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ৪২টি টিভি চ্যানেল এবং রেডিও স্যাটেলাইটটির ব্যবহার করছে পূর্ণমাত্রায়।
এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা সংস্থা, বাংলাদেশ আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থাসহ বেশ কিছু রাস্ট্রায়ত্ব সংস্থা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে আসছে। ডিটিএইচ সেবা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থা আকাশ এই স্যাটেলাইটের ৫টি ফ্রিকোয়েন্সী নিজেদের হাতে রেখেছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং আশেপাশের দেশগুলোতে ডিটিএইচ ব্যবসা বাড়াতে চায়।
শুধু বেসামরিক সংস্থা নয়, বাংলাদেশের আধা-সামরিক সংস্থা বিজিবি তাদের বর্ডার মনিটর ম্যানেজমেন্ট এবং কমিউনিকেশন এর জন্য বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট ব্যবহার করা শুরু করেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাদের বিওপি গুলোর সাথে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম নয়, সেখানে এই স্যাটেলাইট যোগাযোগের মাধ্যমকে করেছে আরও বেশি নিরাপদ এবং সহজ। সামরিক বাহিনীর মধ্যে বাংলাদেশ সেনা এবং নৌবাহিনী বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়েছে যা এদের তথ্য আদান প্রদানকে করেছে আরও বেশি নিরাপদ।
ভূমি কিংবা সাগর যেখানেই হক বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীগুলো নিজস্ব চ্যানেলে আরও নিরাপদে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে আরও উন্নত করেছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিধি বিপুল অংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে দেশ এবং দেশের বাইরে নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম।
শুধু দেশী সংস্থা নয় বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট থেকে ভাড়া নেয়া ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,
১) হন্ডুরাস – ২টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
২) তুরস্ক – ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
৩) ফিলিপাইন- ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল (আরও একটি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে)।
৪) ঘানা – ২ টিভি চ্যানেল (আরও একটি সম্প্রচারের অপেক্ষায়)।
৫) ক্যামেরুন – ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
৬) দক্ষিণ আফ্রিকা – ২টি অনলাইন ভিত্তিক টিভি চ্যানেল।
স্যাটেলাইট পাঠানোর পর থেকে এই পর্যন্ত বিশ্বের ৬টি দেশের ১১টি সংস্থা এই স্যাটেলাইটটি ব্যবহারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ডের পাঠানো থাইকম৪ ও বঙ্গবন্ধু – ১ স্যাটেলাইট এর সাথে ইন্টার কানেক্টিভটির অধীনে যেসব অঞ্চলে থাই স্যাটেলাইট কভারেজ নেই সেখানে বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বিদেশি এসকল সংস্থা থেকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে। পাশাপাশি দেশীয় মিডিয়া সংস্থাগুলো বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট ব্যবহার করায় বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশ আগামী নয় বছরে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে পরিচালনা ব্যয় তুলে আনতে সক্ষম হবে।
সূত্র: ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম