আগামী চার মাস পরেই সারাবিশ্বে মোট ১৫ লাখ ফাইভজি বেজ স্টেশন হবে, যার মধ্যে থেকে এই পর্যন্ত ৮১টি টেলিকম ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠান সাত লাখেরও বেশি ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু করেছে। এবং এর আওতায় আছে নয় কোটির বেশি ফাইভজি ব্যবহারকারী। যেসব দেশে ফাইভজি সুবিধা রয়েছে বিশ্ব জিডিপি-তে (মোট দেশজ উৎপাদন) তাদের অবদান ৭২ শতাংশ। হুয়াওয়ে আয়োজিত ‘বেটার ওয়ার্ল্ড সামিট ২০২০’ -এ প্রতিষ্ঠানটির রোটেটিং চেয়ারম্যান গুয়ো পিং তার এই প্রত্যাশা এবং তথ্য ব্যক্ত করেন।
আজ থেকে অনলাইনে শুরু হওয়া ‘বেটার ওয়ার্ল্ড সামিট ২০২০’ সামিটটি চলবে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত। সামিটের প্রথম দিনে মূল বক্তব্য প্রদান করেন হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান গুয়ো পিং। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘সমাজের সবক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরাণ্বিত করতে পারে ফাইভজি।’
বৈশ্বিক মহামারি আমাদের প্রতিদিনকার জীবন ও কাজের ধরণে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এবং যা অর্থনীতিতেও বড় ধরণের প্রভাব ফেলেছে। এক্ষেত্রে, এ ভাইরাস মোকাবিলায় মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে সহায়তা করতে পারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)।
গুয়ো পিং বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে অংশীদার, ক্যারিয়ার ও এন্টারপ্রাইজ সহ অন্যান্য গ্রাহককে নিয়ে একসাথে প্রযুক্তি ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব।’
করোনাভাইরাসের শুরুর দিকের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, ইতালি ও চীনের অভিজ্ঞতা নিয়ে হুয়াওয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় নয়টি সমাধান নিয়ে এসেছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৈশ্বিক মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হবে, সেটা হোক হাসপাতালের নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, রিমোট কনসালটেশন, অনলাইন শিক্ষা কিংবা সরকারি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পুনরায় চালু করা; অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করতে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে হুয়াওয়ের এর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে সহায়তা করছে।
গুয়ো পিং বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা এ বছরের শেষ নাগাদ ১৫ লাখ ফাইভজি বেজ স্টেশন হবে। বৈশ্বিকভাবে ফাইভজি ডেপ্লয়মেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের আমাদের বিস্তৃত প্রয়োগের ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। যা আমাদের ফাইভজি’র পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচনে সহায়তা করবে।’
এছাড়াও, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ফাইভজি মানে শুধুমাত্র উন্নত কানেক্টিভিটিই নয়। যখন ফাইভজি, কম্পিউটিং, ক্লাউড এবং এআই’র (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মতো প্রযুক্তি একসাথে ব্যবহার করা হবে, তখন তা প্রধান পাঁচটি টেক ডোমেইন – কানেক্টিভিটি, এআই, ক্লাউড, কম্পিউটিং এবং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাপ্লিকেশন এর ক্ষেত্রে নানা সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
গুয়ো পিং বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস ও শহরগুলোতে পাঁচটি বড় ডোমেনের সমন্বয়ে আমরা বিস্তৃত পরিসরের ডিজিটাল রূপান্তরের চাহিদা পূরণে সক্ষম। বিশ্বের বহু সংস্থা ইতিমধ্যে ফাইভজি প্রযুক্তির ফল ভোগ করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শেনঝেন বিমানবন্দর যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং বিমাবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের বোর্ডিং টাইম ৪০ মিনিট থেকে ২৫ মিনিটে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।’
পাঁচটি ডোমেইনের প্রতিটিতে হুয়াওয়ের সক্ষমতা রয়েছে। গুয়ো পিং আরও বলেন, ‘গ্রাহক ও অংশীদারদের চাহিদা মেটানোর জন্য পরিস্থিতি ভিত্তিক সমাধানে আমরা ডোমেইন ভিত্তিক সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারি। যা ফাইভজি প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ সম্ভাবনা উন্মোচন ও বাণিজ্যিক সাফল্যের মূল বিষয়।’
গুয়ো পিং বলেন, ‘ফাইভজি প্রযুক্তির বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য পুরো খাতকে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রথমত, এ শিল্পের জন্য আমাদের একসাথে মানদণ্ড তৈরি করতে হবে। পরবর্তীতে, অংশীদারদের চাহিদ অনুযায়ী সক্ষমতা বৃদ্ধি, যৌথ উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং এ ভ্যালু চেইনে সবার প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে হুয়াওয়ে তাদের প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করবে।’
বর্তমান সঙ্কটকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বল্প ও দীর্ঘ উভয় মেয়াদে লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নেটওয়ার্কের মানোন্নয়নের উপায় বের করতে হবে, যা পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সেরা সমাধান দিবে। গুয়ো পিং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ নেটওয়ার্ক পরিকল্পনায় চারটি বিষয়কে বিবেচনা করা উচিৎ। এগুলো হলো: ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি, অনিশ্চয়তা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অর্থের সঠিক ব্যবহার। এক্ষেত্রে, উপযুক্ত নেটওয়ার্কের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ আল্ট্রা-ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি। তবে, মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ সম্ভাবনা উন্মোচনে এবং ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনে নেটওয়ার্ক সেবার সর্বোচ্চ ব্যবহার।
গুয়ো পিং আরও বলেন, ‘আমাদের ফাইভজি, কম্পিউটিং, ক্লাউড, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাপ্লিকেশনের পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে। আমাদের এ সক্ষমতাগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা পরিস্থিত ভিত্তিক সমাধান দিতে পারবো, যা ফাইভজি প্রযুক্তির সম্ভাবনা উন্মোচন করবে এবং আমাদের গ্রাহক ও অংশীদারদের বৃহৎ পরিসরে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনে সহায়তা করবে।’
এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিশ্লেষক, গণমাধ্যম ও খাত সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনেরা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চায়না টেলিকমের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর লু গুয়েচিং, ইটিসালাত ইন্টারন্যাশনালের চিফ টেকনোলজি অফিসার হাতেম বামাতরাফ, এমটিএন’র চিফ মার্কেটিনফ অফিসার বার্নিস স্যামুয়েলস, জিএসএম’র চিফ টেকনোলজি অফিসার অ্যালেক্স সিনক্লেয়ার এবং ইটিএসআই’র থ্রিজিপিপি হেড ও চিফ টেকনোলজি অফিসার ও থ্রিজিপিপি এমসিসি’র প্রধান অ্যাড্রিয়ান স্কার্স।