বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) উদ্যোগে ‘ডায়লগ অন ডাটা প্রাইভেসি অ্যান্ড ডাটা প্রটেকশন’ শীর্ষক একটি আলোচনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে ডাটা বা তথ্যের কোনো শ্রেণীবিন্যাস নেই এবং সুরক্ষার জন্য নেই কোনো সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন। তাই ডাটা প্রাইভেসির গুরুত্ব অনুধাবন করে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের নিয়ে বেসিস এ অনলাইন সংলাপের আয়োজন করে।
ওই সংলাপে ভারতের স্বনামধন্য ল ফার্ম ‘খাইতান অ্যান্ড কো’র বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। খাইতান ভারতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল ২০১৮-এর খসড়া তৈরিতে ভারত সরকারকে পরামর্শ প্রদানের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তারা ডাটা প্রাইভেসি ও প্রটেকশনের ওপর একটি উপস্থাপনা পেশ করেন। আলোচকরা সেটির ওপর ভিত্তি করে তাদের মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। তিনি বাংলাদেশে ডাটা প্রাইভেসি এবং প্রটেকশনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাটা প্রাইভেসি ও ডাটা প্রটেকশন দেশের প্রচলিত তথ্য অধিকার আইন দ্বারা পুরোপুরি সংরক্ষিত হচ্ছে না। তাই ব্যক্তি গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার্থে তথ্য গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিত করতে বিরোধপূর্ণ যেকোনো আইন বাতিল ও সংশোধন করার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপের আলোকে বেসিস ডাটা প্রাইভেসি এবং ডাটা প্রটেকশন বিষয়ে খসড়া একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থাপন করবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন খায়তান অ্যান্ড কো পার্টনার সুপ্রতীম চক্রবর্তী, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. রোকন-উজ-জামান, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার কেএম তানজীব-উল আলম, ব্যারিস্টার মিতি সানজানা এবং পার্টনার লিগ্যাল কাউন্সেল বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং করপোরেট ও মেধাসম্পদ আইনজীবী ব্যারিস্টার এবিএম হামিদুল মিসবাহ, এসপ্যায়ার টু ইনোভেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের চিফ টেকনোলজি অফিসার মোহাম্মদ আরফে এলাহী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (প্রোগ্রামিং) দেবদুলাল রায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এডিসি মো. নাজমুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিস্টেমস ম্যানেজার মোহাম্মদ শফিকুর রহমানসহ প্রমুখ।
শুরুতেই খায়তান অ্যান্ড কোর পার্টনার সুপ্রতীম চক্রবর্তী ডাটা প্রাইভেসি ও ডাটা প্রটেকশন সম্পর্কে তার উপস্থাপনায় বলেন, অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা যে ডাটাগুলো দিচ্ছি এমনকি ট্রেনে-বাসে একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তার সময় নিজেদের যেসব তথ্য আদান-প্রদান করছি, তার গোপনীয়তা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর তথ্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আইন তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। ভ্রমণের সময় পাসপোর্ট বা ভিসাতে প্রদত্ত তথ্য হচ্ছে ব্যক্তিগত ডাটা এবং শরীরের তাপমাত্রা বা স্বাস্থ্যগত তথ্যাদি হলো স্পর্শকাতর ডাটা। এ-সংক্রান্ত আইন তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের কতকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
ড. রোকন-উজ-জামান বলেন, এখনো আমাদের দেশে ডাটা প্রাইভেসি নিয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। যার ফলে আমরা এখনো জানি না ডাটা প্রাইভেসি নিয়ে আমাদের দেশে আসলে কীভাবে কাজ করা যেতে পারে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশের কোনো আইনি কাঠামো নেই এ বিষয়ে। কম্পিটিশন ল, কনজিউমার ল এবং ডাটা প্রটেকশন লর মধ্যে সাদৃশ্য আনতে হবে। ভবিষ্যতে কী হবে তার ওপর ভিত্তি করে এ আইন তৈরি করতে হবে। এছাড়া ব্যক্তিগত, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে কার কী দায়িত্ব থাকবে তা ঠিক করতে হবে।