করোনার অতিমারির প্রভাবে গত ছয় মাসে দেশে অনেক কিছুই যখন স্থবির হয়ে পড়েছে সে সময়েই সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা পজেটিভ রোগী পাওয়ার পর থেকে এই ছয় মাসে (৮ সেপ্টেম্বর হবে ছয় মাস) মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনকে স্বাভাবিক রাখতে ‘নগদ’ এমন কিছু সেবা নিয়ে হাজির হয়েছে যা দেশে আগে কখনো কেউ চিন্তাও করেনি।
‘মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ এই মূলমন্ত্রটি মনে ধারণ করে শুরু থেকেই কাজ শুরু করে ‘নগদ’। যে কারণে শুরুর দিকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিলে ৬০ লাখ টাকা প্রদান করা হয় দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে। একই সঙ্গে কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয় সর্বাত্মক ব্যবস্থা।
টানা লকডাউনের কারণে কাজ হারানো ৫০ লাখ পরিবারকে এমএফএস-এর মাধ্যমে ২,৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ১৭ লাখই বিতরণ করা হয় ‘নগদ’ এর মাধ্যমে। এই সময়েই বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নিসা মুজিবের ৯০তম জন্মদিনে দুস্থদের মাঝে ভাতা বিতরণেও প্রধানমন্ত্রী বেছে নেন কেবল ‘নগদ’-কে।
অতিমারির এই সময়টাকে মানুষ যাতে ঘরেই থাকে তার অংশ হিসেবে ভিসা ও মাস্টারকার্ড থেকে ‘নগদ’ ওয়ালেটে টাকা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে ‘নগদ’। করোনার টেস্টের ক্ষেত্রে লেনদেন প্রক্রিয়া সহজ করতে ফি প্রদান প্রক্রিয়া ডিজিটাল করে দেয় দেশের দ্বিতীয় সেরা এমএফএস অপারেটরটি। ফলে ঘরে বসে করোনা পরীক্ষার ফি প্রদান, কিংবা কোনো বুথে গিয়েও করোনা পরীক্ষার ফি প্রদান হয়ে যায় ঝামেলা মুক্ত।
পাশাপাশি কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে কলেজ ভর্তি ফি জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। দুই লাখ গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন-ভাতা ‘নগদ’ এর মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। করোনার সময়ে দুই হাজার ই-কমার্স ও পাঁচ হাজার মার্চেন্টকে ‘নগদ’ প্ল্যাটফর্মে তুলে আনা হয়েছে। তাছাড়া দেশের বৃহৎ এফএমসিজি কোম্পানিগুলোকে লকডাউনের সময় লেনদেনের বন্দোবস্তো করে দেয় ‘নগদ’ই। একইভাবে ওই সময়ে রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের এজেন্টরা যখন দৈনিন্দিন লেনদেন করতে পারছিল না তখনো সহায়তার হাত বাড়ায় রাষ্ট্রীয় এই ডিজিটাল আর্থিক সেবা সংস্থাটি।
তবে এ সময়ে উদ্যোক্তাদের জন্য ‘নগদ’-এর সবচেয়ে চমক জাগানিয়া সেবা ছিল বাজারে প্রচলিত রেটের চেয়ে মাত্র একতৃতীয়াংশ খরচে টাকা ক্যাশ-আউট করার ব্যবস্থা করা। এর আওতায় পাঁচ ধরনের উদ্যোক্তাদের হাজারে ৬ টাকায় ক্যাশ-আউট করার সুযোগ পাচ্ছেন, যা তাদের ব্যবসার খরচ কমাতে সহায়তা করছে। একই সঙ্গে লকাউনের সময়ে ডাক বিভাগের মাধ্যমে গ্রাম থেকে রাজধানী পণ্য দএনে বড় বড় দোকানে বিক্রির ব্যবস্থাও করে দেয় ‘নগদ’।
আর্থিক সেবার ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদপ্তর তাদের তিনটি ভাতা এমএফএস-এর মধ্যে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এখানেও ‘নগদ’-এর অবস্থান শীর্ষেই আছে।
করোনার আগে থেকেই ‘নগদ’ আর্থিক সেবাকে ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তবে মার্চের শুরু থেকে এক্ষেত্রে গতি পেয়েছে বলে মনে করেন ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক।
কোভিড-এর ছয় মাসে ‘নগদ’-এর সেবা সম্পর্কে তানভীর আহমেদ মিশুক বলেন, “রাষ্ট্রীয় একটি সেবা দেশের জরুরি প্রয়োজনে সেরা সাফল্য নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেনি যে ‘নগদ’ এতটা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। জনগণের ভালোবাসা এবং আস্থার কারণেই আমরা তাদের জীবনকে ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারছি। আমরা চাই সরকারের ভিশন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ‘নগদ’ নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে।”
চলতি সপ্তাহে ‘নগদ’-এর আয় থেকে ডাক বিভাগকে ১ কোটি ১২ লাখ টাকার লাভ দেওয়া হয়েছে। মূলত করোনাকালের সেবা থেকেই এসেছে এই আয়। ডাক বিভাগের কোনো সেবা থেকে লাভ পাওয়ার ঘটনা গত ২০০ বছরে ডাক বিভাগের ইতিহাসে প্রথম।