বাবা মা নাম রেখেছিল রূপকথা। ছেলের নাম রূপকথা,তার কার্যকলাপ ও সব রূপকথার মতোই৷
ওয়াসিক ফারহান রূপকথা। বিশ্বের সবচেয়ে খুদে প্রোগ্রামার। বয়স তার এখন মাত্র ১৪ বছর৷ মাত্র ছয় বছর বয়সে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের নাম লিখেছিল ওয়াসিক ফারহান রূপকথা৷ মাত্র ছয় বছর, এমন শিশু আছে এই বয়সের ব্রেইন ডেভলপমেন্ট ১০০ ভাগ হয় না। খেলনা ও পুতুল নিয়ে খেলার বয়স। কিন্তু খেলার পুতুল ছেড়ে এডোবি ফটোশপ , পাওয়ার পয়েন্ট, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, উইন্ডোজ এক্সপি ইত্যাদি নেই খেলা করত ওয়াসিক ফারহান রূপকথা৷ বাসস্থান তার বাংলাদেশের মাটিতেই৷ ঢাকার গুলশানের বাড়িতে থাকাকালীন গিনেস ওয়ার্ল্ড বুক রেকর্ড এ নাম লিখেছিলো ওয়াসিক ফারহান৷
কেন তাকে নিয়ে এতো মাতামাতি?
ছোটবেলা থেকে কম্পিউটারে নিয়ে খেলত ওয়াসিক ফারহান৷ ধীরে ধীরে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল সহ আরো অনেক ধরনের অফিস সফটওয়্যার চালানোর দক্ষতা অর্জন করে ওয়াসিক ফারহান । মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে তার টাইপ করার স্পিড দেখে অবাক হয়ে যাবেন।
কম্পিউটারের প্রাণ বলা হয়ে থাকে প্রোগ্রামকে৷ এবং সেই প্রোগ্রামের বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে ওয়াসিক ফারহান মাত্র ছয় বছর বয়সে।
আর সেই থেকেই শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত ওয়াসিক ফারহান৷
চোখ ফুটতে না ফুটতেই পিসির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকত ওয়াসিক ফারহান। পিসির মাউসটি ঘষে ঘষে খেলা করতো সে ৷ খাবারের প্রতি অনীহা ছিল । কম্পিউটারের পাওয়ার বাটনে ক্লিক না করলে তার খাওয়া হতো না৷ সারাদিন কম্পিউটার এর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকত সে। এই বয়সের ছেলেমেয়েরা সর্বোচ্চ হলে অ্যানিমেশন কার্টুন এর প্রতি বেশ ঝোক৷ তবে ওয়াসিক ফারহান একটু ব্যতিক্রমি ছিল৷ বরং অ্যানিমেশন কার্টুন নয় মাত্র দুই বছর বয়সে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এ টাইপিং করতে শুরু করে৷ সে৷ আর সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে ওয়াসিক ফারহান কম্পিউটার দক্ষতা অর্জন করেছে কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই। তার মায়ের নাম ফারহিন রিসা৷ ছেলের আবদার মেটাতে কোন ধরনের ত্রুটি রাখেনি মা। আর ছেলের আবদার বেশি নয় কেবল কম্পিউটারটি ঠিকঠাক মত কাজ করলে চলবে৷ মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে কম্পিউটার এর পেছনে ১২ ঘণ্টা করে সময় ব্যয় শুরু করে ওয়াসিক ফারহান । স্বাস্থ্যের কিছুটা অবনতি দেখা দিল মা বাবা দুজনে সচেতন হয় এবং ছেলেকে কম্পিউটার থেকে দূরে রাখে। কিন্তু ওয়াসিক ফারহান এক ধরনের জেদ করে প্রতিদিন কম্পিউটারে ১২থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করত ৷ এই বয়সে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড থেকে শুরু করে, প্রজেক্ট তৈরি সিস্টেম, অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাজ গুলো ধীরে ধীরে রপ্ত করতে শুরু করে ওয়াসিক ফারহান রূপকথা।
তবে গেম খেলার প্রতি বিশেষ এক ধরনের ঝোক ছিল তার৷ ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ধরনের গেম ডাউনলোড করে সেগুলো নিজেই ইন্সটল করত সে। হার্ডওয়ারের বিষয়ে টনটনে ধারণা ছিল ওয়াসিক ফারহানের৷
ওয়াসিক ফারহান কেবলমাত্র প্রোগ্রামারদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে, ব্যাপারটা তেমন নয়৷ তাক লাগিয়ে দিয়েছে গেমারদের৷ টার্মিনেটর থ্রি, প্রিন্স অফ পার্শিয়া ইত্যাদি জটিলতম গেমগুলোকে সহজভাবে নিয়েছে ওয়াসিক ফারহান।
ওয়াসিক ফারহান এর মা জানান, “ওয়াসিক ফারহান কে কম্পিউটার জ্ঞান অর্জনের জন্য কোন ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে হয় নি৷ ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার এর প্রতি এক ধরনের ঝোম ছিল ওয়াসিক ফারহানের৷
ধীরে ধীরে তার কম্পিউটার দক্ষতা এক কান থেকে দু কান এরকম করতে করতে বিভিন্ন ধরনের সংবাদমাধ্যম, অতঃপর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড।
বাংলাদেশের ওয়াসিক ফারহান বিশ্বের কাছে পরিচিত৷
বিশ্ব দরবারে ওয়াসিক ফারহান বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। কম্পিউটার এবং তথ্য প্রযুক্তির হর্তাকর্তা দেশগুলোকে ছাপিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রোগ্রামার ।
বাবা-মা ওয়াসিক ফারহান এর নাম রেখেছিল রূপকথা । হ্যাঁ গল্পটা আসলে রূপকথার মতোই।
শুধু রূপকথা তার, তার বাবা-মার জন্যে রূপকথা নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য রূপকথা!