মানুষের শ্বাস নিশ্বাস এর মত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ছাড়া এখন একটি দিনের কথা কল্পনা করা খুব মুশকিল৷ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে অগ্রসর বাংলাদেশ। পূর্বের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে৷
শুরুর দিকে কেবলমাত্র মানুষকে সেলুলার ডাটার উপর নির্ভর থাকতে হতো৷ কিন্তু বর্তমানে গ্রাম এবং মফস্বল অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড লাইন প্রবেশ করার ফলে সিম কোম্পানিগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ।
গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৩৪ লাখ। যার মধ্যে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৯ কোটি ৪৯ লাখ কিন্তু গত জুন মাসে যার সংখ্যা ছিল, নয় কোটি ৪২ লাখ।
সুতরাং মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে সাত লক্ষ।
এই আর্টিকেলটি শুরুতেই বলেছিলাম সেলুলার ডাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দেশের জনগণ৷ বিটি আর সি’র এক রিপোর্ট অনুসারে গত মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশে সিম কোম্পানিগুলো তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহক হারিয়েছে দুই লাখেরও বেশি৷
মে মাস পর্যন্ত দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ, কিন্তু সেই সংখ্যা মাত্র তিন মাসে বেড়ে ৮৫ লাখ৷
হঠাৎ করে এমন ব্রডব্যান্ড লাইন গ্রাহক বাড়ার কারণ কি?
কারণ হয়তোবা আমরা কমবেশি সবাই অনুমান করতে পারছি । বিশেষ করে যারা সেলুলার ডাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং ব্রড ব্যান্ড লাইন এর ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করছে । আসলে লকডাউন এর সময় মানুষ ঘরে বসে সময় কাটানোর জন্য অফুরন্ত ইন্টারনেট এর উৎস হিসেবে ব্রডব্যান্ড লাইন কে বেছে নিয়েছে।
বিশেষ করে মফস্বল এর অঞ্চলগুলোতে বর্তমানে ব্রডব্যান্ড লাইনের জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে৷
তবে মফস্বলে ব্রডব্যান্ড লাইন ব্যবহারকারিদের অভিযোগ যে শহরাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড লাইন সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর ভেতরে এক ধরনের প্রতিযোগিতা কাজ করে । যার ফলে তারা তুলনামূলক বেশি সুবিধা দিয়ে থাকে৷ এবং ইন্টারনেট দ্রুতগতিসম্পন্ন। তবে মফস্বল এলাকায় যে সকল ব্রডব্যান্ড লাইন সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলো রয়েছে তাদের মধ্যে খুব একটা প্রতিযোগিতা নেই৷ যার ফলে গ্রাহকদের তেমন একটা সুবিধা নেই। উপরন্ত এখানে ইন্টারনেটের স্পিড খুবই কম, মাস গেলে বেশ কয়েক টাকা গুনতে হয় গ্রাহকদের।
প্রশ্ন করা হয়েছিল সেলুলার ডাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কেন?
কিছুদিন আগেও সেলুলার ডাটার দাম বেশ নিয়ন্ত্রণের ভেতরে ছিল। এবং যেহেতু সেলুলার ডাটা ব্যবহার করে যেকোন জায়গায় ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় সেই কারণে সেলুলার ডাটা কয়েকদিন আগে জনপ্রিয় ছিল। তবে ইদানিং সেলুলার ডাটার দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে৷ এবং সেই কারনেই তারা ব্রডব্যান্ড সেবা নিতে ইচ্ছুক। এখন বাসা থেকে বেশি বের হওয়া হচ্ছে না । সে কারণেই বাসায় বসে ব্রডব্যান্ড সেবা উপভোগ করতে চাচ্ছে মফস্বলবাসীরা।
তার পাশাপাশি বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এর সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন,” দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে টেলিমেডিসিন, ভিডিও কনফারেন্স এবং অনলাইন ক্লাস গুলো ইন্টারনেটের ব্যবহার দুই গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে যদি সরকারের সাহায্য পাই তাহলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ইন্টারনেট এর কোন বিকল্প নেই৷
ঢাকার চেয়ে এখন মফস্বলে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। শুধুমাত্র মফস্বল নয় ইন্টারনেট এখন পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত৷
তবে ব্রডব্যান্ড লাইনের সুবিধা বৃদ্ধি করলে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য সকল ধরনের আইসিটি যন্ত্রাংশের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং ইন্টারনেটের সুষ্ঠু ব্যবহার করার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশের সরকার।
আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে।
তথ্য সূত্র : বিটিআরসি