মার্টিন কুপার। কাজ করতেন ছোট্ট একটি কম্পানী। একটি টেলিযোগাযোগ কম্পানী। যার নাম ছিলো মোটরোলায়৷ খুব যে বড় বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন তা নয়, ছোট খাটো পরিসরের এই কম্পানীটিতে কাজ করর খুব বেশী আয় হতো না তার।
মার্টিন কুপারের স্বপ্ন ছিলো এমন একটা যন্ত্র তৈরি করার যেটা ব্যাবহার করে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ করতে পারবে৷ তিনি মনে করতেন টেলিফোনের তার হচ্ছে কুকুরের গলার দড়ি৷ পৃথিবীর সব মানুষের যোগাযোগ করার অধিকার আছে। তার প্রিয় জনের সাথে৷
বলা হয়ে থাকে মার্টিন কুপার বিভিন্ন সাইন্স ফিকশনের গল্প কাহিনী থেকে মোবাইল ফোন তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। সেই সকল গল্প তে যেসকল চরিত্র থাকতো তারা একে অন্যের মাঝে যোগাযোগ করার জন্য কমিউনিকেটর নামের একটি যন্ত্র ব্যাবহার করত।
মার্টিন কুপার যখন মোবাইল ফোন তৈরি করে তখনো আসলে ব্যাপারটা সবার কাছে সাইন্স ফিকশনের গল্প গুলোর মতোই ছিলো।
১৯৭৩ সালে একটি হোটেলে সর্ব প্রথম বারের মতো মার্টিন কুপার এবং তার বন্ধুরা মিলে মোবাইল ফোনের স্ট্রাকচারের উদ্ভোদন করে। এটা অনেকটা অদ্ভুত রকমের ছিলো। এখনকার স্লিম শেপের ফোন বা সাইন্স ফিকশনের কমিউনিকেটরের মতো ছিলো না। ছিলো বাক্সের মতো৷ ১ কেজির বেশী ওজন। গাড়িতে ব্যাবহার করা যেতে পারতো। তবে হাতে ধরে রাখা অসম্ভব ব্যাপার ছিলো৷ ২০ মিনিট কথা বললেই চার্জ শেষ হয়ে যেত।
সবাই সেই ফোনটা দেখে হেসেছিলো। হ্যা সেই আমলে মানুষ হেসেছিলো। আর আমরা বিষ্ময় প্রকাশ করি৷ কেন হেসেছিলো জানেন?
মার্টিন কুপার ফোন তৈরি করেছিলো তা ঠিক আছে। কিন্তু ফোনটা বহন করতে খুব কষ্ট হতো। যার ফলে সবাই সেই মোবাইল ফোনটিকে পরিহার করতে শুরু করে।মার্কিন কুপার এর এক বন্ধুর জানান, মার্টিন কুপার অফিসে কাজ করার সময় আমাদের সবাইকে একটি গল্প শোনান। সে বলে এমন একদিন আসবে যেদিন এই ফোনে শুধু কথা বলে যাবে না । তার সাথে আরও অনেক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হবে। ফোন দিয়ে মানুষ সবকিছু করবে৷ এমন একটা সময় আসবে যখন মানুষের জন্ম নামের সাথে সাথে একটি করে মোবাইল নাম্বার থাকবে। মার্টিন কুপার এর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন মোবাইলে কথাবলা খুব কমই হয়, তবে ভিডিও গেমিং, ভিডিও রেকর্ডিং, ক্যামেরা, গান, ইন্টারনেট সব কিছুই রয়েছে । মূলত কম্পিউটারটিকে এখন পরিবর্তিত করে স্মার্টফোনে রুপান্তরিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অদূর ভবিষ্যতে কম্পিউটারের জায়গা দখল করবে স্মার্টফোন।
মোটরোলায় কম্পানি যে কোম্পানিটিতে মার্টিন কুপার কাজ করতেন তাঁরা মার্টিন কুপার এর কথায় সায় দিয়েছিল । এবং মার্টিন কুপার এর চিন্তা ধারা খুব পছন্দ হয়েছিল। সেইজন্যই কোম্পানিটি একটি সেলফোন নির্মাণের জন্য প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে। সেল ফোন তৈরীর কারিগর হিসেবে মার্টিন কুপার সহ আরো 20 জন ছিল। অদূর ভবিষ্যতে সেলফোনটি মানুষকে কিভাবে প্রভাবিত করবে, ভবিষ্যতের সেলফোনটি কেমন হতে পারে সেই সবকিছু সম্পর্কে মানুষকে জানানোর জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল আরো কিছু মানুষ । তারা পুরো নিউইয়র্ক শহরে মানুষকে মোবাইল ফোন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে থাকে । তার পাশাপাশি নিউইয়র্ক শহরের ভেতরে কিভাবে ফোনটি কাজ করবে সেটি নিয়েও বেশ চিন্তা ভাবনা ছিল তাদের।
অরহচ মার্টিন কুপার এর সেই এক কেজি ওজনের ফোনটি এখন আমাদের সকলের হাতে হাতে চলে এসেছে৷ মার্টিন কুপার এর স্বপ্ন এবং মার্টিন কুপার এর চিন্তা ভাবনা বাস্তবায়িত হয়েছে৷ এখন শুধু ফোন দিয়ে কথা বলাই নয় তার পাশাপাশি আরও অনেক ফিচার যুক্ত হয়েছে। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে এনে দিয়েছে নতুন এক বেগ!