সিটিসেল! যাদের শৈশব নব্বই দশকে কেটেছে ,তাদের জন্য আজীবন স্মৃতিময় হয়ে থাকবে সিটিসেল৷ দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর সিস্টেম হিসেবে যাত্রা শুরু করে সিটিসেল । বলতে গেলে সিটিসেল ছিল বাংলাদেশের সকল মোবাইল অপারেটরের পথপ্রদর্শক৷
সিটিসেলের দৃষ্টিনন্দন এডভেটাইজ গুলো দাগ কেটে রয়েছে আমাদের মনের কোটরে। ২০১১ সালে যখন মোবাইল ফোনের প্রচলন তেমনভাবে হয়নি তখনো সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লক্ষ৷
তবে সিটিসেলের ব্যর্থতার কারণ কি ছিল? দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর হলেও কেন তাদের ব্যবসা গোটাতে হয়েছিল?
দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড এবং পরবর্তীতে প্যাসিফিক বাংলাদেশ লিমিটেড পরিবর্তিত হয়ে সিঙ্গাপুরের সিংটেল এর সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল সিটিসেলের৷
শুরুতে তারা পোষ্টপেইড সেবা চালু করেছিল৷ পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে প্রি-পেইড সিস্টেম চালু করে। তবে শুরুর দিকে সিটিসেল এর কল রেট ছিল আকাশ ছোঁয়া। যেকোনো লোকাল নাম্বারে ১ মিনিট কথা বললে ১০ টাকা কেটে নেওয়া হতো । এমনকি কল রিসিভ এর জন্য তারা টাকা কেটে নিত। প্রতি মিনিটে রিসিভিং কলের জন্য কেটে নেওয়া হত ৮ টাকা।
দিন যত দূরে যেতে থাকলো সিটিসেল কোম্পানিকে মার্কেট ডাউন করানোর জন্য অন্য কোম্পানিগুলোর আবির্ভাব হতে থাকলো৷ এবং তার সাথে তারা নিয়ে আসলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। সিটিসেল গ্রাহক তাদের ফোনে কেবলমাত্র সিটিসেল সিম চালু রাখতে পারতো।
তবে অন্য ফোন কোম্পানিগুলোর এই নিয়ম ছিল না।
তবে তার পরেও তারা নতুন নতুন মোবাইল ফোন, এবং আকর্ষণীয় প্রিপেইড অফার এর মাধ্যমে বাজার ধরে রেখেছিল৷ সকল মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সাথে তাল মিলিয়ে সিটিসেল এগিয়ে যাচ্ছিল৷ এবং মূলত এই সকল সুবিধা দেওয়ার কারণে ২০১১ সালে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ লাখেরও বেশি । ২০১১ সাল পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল তবে ২০১১ সালে সবাই যখন জি এস এম টেকনোলজির দিকে ধাবিত হচ্ছিল তখনো সিটিসেল সিডিএম সিস্টেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অবশ্য একটি মোবাইল কোম্পানি তাদের জিএসএম টেকনোলজী ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করেছিল, তবে তারা খামখেয়ালি করে পেছনে থেকে যায়। পরবর্তীতে দেশে যখন থ্রিজি সিস্টেম আসে তখন তারা জিএসএম টেকনোলজি ব্যবহারকরার অনুমতি পায়৷ তবে এবারও তারা খামখেয়ালীর পথকেই বেছে নেয়৷ যার ফলে ধীরে ধীরে গ্রাহকেরা সিটিসেল বিমুখি হতে থাকে৷ দিনকে দিন তাদের গ্রাহক সংখ্যা কমতে থাকে, এবং পর্যায় গ্রাহক সংখ্যায় শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়ায়৷ ২০১৫ সালে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ৫০ লক্ষ থেকে মাত্র পাঁচ লাখে পরিণত হয়৷
সিটিসেলের আকাশ সম ঋণ! বিটিআরসির কাছেই তাদের ঋণ ছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা৷ বিদ্যুৎ বিল সহ দেশের অন্যান্য ব্যাংকের কাছে আরো শতকোটি টাকা ঋণী ছিল সিটিসেল ।
এরপরের কাহিনী কারোরই অজানা নয়!বিশিষ্ট তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সিটিসেলের যেসকল হর্তাকর্তারা ছিল, তাদের খামখেয়ালি এবং সনাতন পদ্ধতিতে কোম্পানিটি চালানোর জন্য তাদের কোম্পানির এত বড় ধস নেমেছে ।
দিনশেষে সিটিসেলের গল্প আমাদের এই টুকুই শিক্ষা দেয় যে, সব সময় সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়৷ কখনো সময়কে অবজ্ঞা করে সনাতন প্রথা অবলম্বন করা মোটেও উচিত নয়৷ সিটিসেলের এর মত এত বড় বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র খামখেয়ালীর জন্য আজ বিলুপ্ত হয়ে গেল । তবে তার পরও সিটিসেলের সেই ৯০ দশকের আকর্ষণীয় রোমান্টিক এবং দৃষ্টিনন্দন এড গুলো আমাদের মনে দাগ কেটে থাকবে চিরকাল । এবং সেটি একমাত্র স্মৃতি হয়ে থাকবে!