করোনাভাইরাসের কারণে দেশে অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে আগের চেয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৩ সাল নাগাদ ই-কমার্স এর বাজার ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। করোনার কারণে বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে অনলাইনে সেবাপ্রদানকারী ছোট বড় সব প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন দক্ষ প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা।
দেশের ব্যবসার ডিজিটাল রূপান্তর ও অনলাইনভিত্তিক বাজারকে দৃঢ় করতে কাজ করছে বহুজাতিক প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান সিসকো। ডিজিটাল আদান-প্রদানকে সহজ, নিরবিচ্ছিন্ন ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সিসকো নিয়ে এসেছে ‘রেসিলিয়েন্ট ডিসট্রিবিউটেড এন্টারপ্রাইজেস’ বা আরডিই। এই নতুন পোর্টফোলিওর অংশ হিসাবে সিসকো ‘সিকিউরএক্স’ নামে সহজে ব্যবহারযোগ্য ও ক্লাউড-নেটিভ প্ল্যাটফরম চালু করছে। যা ডিজিটাল ব্যবস্থাপনাকে সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত মজবুত করতে সিসকোর চলমান উদ্যোগগুলোর মধ্যে এটি একটি নতুন সংযোজন।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর আগস্টে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৬০ লাখ। গত জানুয়ারি মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৯০ লাখ ছিল। আগস্টে তা বেড়ে ১০ কোটি ৮০ লাখে দাঁড়িয়েছে। এটি আগের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। চলমান মহামারিতে দেশের ভোক্তারা অনলাইন সেবা গ্রহনের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী।
এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স এর বিষয়টি বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী ঢেলে সাজাচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে ক্লাউডে স্থানান্তর, বাসায় বসে বা অফিস থেকে দূরে থেকেও কাজ করার সুবিধা এবং সাপ্লাই চেইনকে আরো টেকসই ও নির্ভরযোগ্য করে তুলতে অটোমেশনের সংযোজন। পাশাপাশি সম্পদের নিরাপত্তা ও কর্মীদের তথ্য গোপনীয়তা রক্ষায় আরো বেশি জোর দিতে হচ্ছে। কেননা নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির সাথে সাথে নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
এ ধরনের বিষয়গুলো আরও সহজ এবং নির্বিঘ্নে করতে সিসকো বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যবসায় ‘রেসিলিয়েন্ট ডিসট্রিবিউটেড এন্টারপ্রাইজেস’ (আরডিই) প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। যার ফলে একটি আধুনিক প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর সাহায্যে তাদের যেকোনো স্থান থেকে বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে অটোমেশন, ডেটা অ্যানালিটিক্স, অ্যাসিওরেন্স এবং পলিসিসহ বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং সিকিউরিটি ফ্রন্ট এবং সেন্টারের সাহায্যে বিতরণকৃত কর্মী, অ্যাপ্লিকেশন এবং ক্লাউড ভিত্তিক সেবা প্রদানে অভিজ্ঞতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নতুন আরডিই পোর্টফোলিওর অংশ হিসাবে সিসকো ‘সিকিউরএক্স’ নামে সহজে ব্যবহারযোগ্য ও ক্লাউড-নেটিভ প্ল্যাটফর্ম চালু করছে। যা বিভিন্ন হুমকি ও সিকিউরিটি বিশ্লেষণের মাধ্যমে নীতি লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য ব্যবহার করা হবে। সিসকো ইন্টারসাইট ওয়ার্কলোড অপ্টিমাইজারটিতে প্রবেশের মাধ্যমে সফটওয়্যার হিসাবে একটি পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা সম্ভব। যার ফলে সংস্থাটি আইটি’র কাজ সহজতর ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারবে।
এটি সিসকোর চলমান উদ্যোগের সর্বশেষ সংযোজন যা দেশের অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরে গতি আনবে। সিসকো তার ব্যবসায়ের জন্য ও আরডিই দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিজেদের নেটওয়াকিং একাডেমির মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজিটাল দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়তা অব্যাহত রখেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান বছর পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নেটওয়াকিং প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সিসকো। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা ৭০ হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও সিসকো দেশজুড়ে নিজেদের অংশীদার বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের রেসিলেন্ট প্রযুক্তি আর্কিটেকচারের সুবিধা প্রদান করতে পারবে।
এই উন্নয়নের বিষয়ে বলতে গিয়ে সিসকো’র সার্ক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুধীর নায়ার বলেন, ‘আমরা দুই দশক ধরে বাংলাদেশে আছি এবং প্রযুক্তি কীভাবে জনগণ ও ব্যবসাকে শক্তিশালী করেছে তা আমরা দেখেছি। আমরা বিশ্বাস করি যে, মহামারিটি দেশের ডিজিটাল উদ্ভাবনের সুযোগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সিসকো নতুন রেজিলিয়েন্ট ডিস্ট্রিবিউটেড এন্টারপ্রাইজেস পোর্টফোলিও চালু করায় আমরা গর্বিত। কারণ এর সাহায্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ডিজিটালাইজড করতে পারবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আগামীর প্রয়োজন মাথায় রেখে এবং ক্লাউড অবকাঠামো, অটোমেশন ও নিরাপত্তায় সিসকোর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থেকে এই সর্বশেষ সংযোজন আনা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুন স্বাভাবিক সময়ে সর্বাধিক সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য ও বিস্তৃত অংশীদারসহ দেশে দক্ষ কর্মী তৈরিতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সিসকো এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়ে উন্নতি সাধন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’
বিশ্বব্যাপী ১ বিলিয়ন মানুষকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে দক্ষ করে তুলতে সিসকোর যে লক্ষ্য এ প্রচেষ্টা তারই অংশ। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে এ দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক টুলস ও টেকনোলজিতে শক্তিশালী করা এবং প্রযুক্তিতে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবি তৈরি করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।