টেলিকম খাতে নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে নতুন একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে ব্রিটিশ সরকার। কোনো টেলিকম কোম্পানি এ আইন লঙ্ঘন করলে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হবে তাদের। এছাড়া এ বিলের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্ক খাতে চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের সম্পৃক্ততায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের আইনগত পথ তৈরি হলো। খবর বিবিসি।
টেলিকমিউনিকেশনস সিকিউরিটি বিল এখনো খসড়া পর্যায়েই রয়েছে। শিগগিরই এটি পার্লামেন্টে পাস হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন আইন অনুসারে, কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উচ্চতর নিরাপত্তার শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তাকে মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিদিন এ জরিমানার পরিমাণ হতে পারে কোম্পানিটির মোট আয়ের ১০ শতাংশ অথবা ১ লাখ পাউন্ডের বেশি।
যুক্তরাজ্যের ফাইভজি বাজারে হুয়াওয়ের প্রবেশ ঠেকাতে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নতুন বিলটির মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আইনি পথ তৈরি হলো। ঠিক কোন উপায়ে হুয়াওয়েকে দূরে রাখা যায়, সে পথও বাতলে দেবে নতুন আইনটি।
এছাড়া বিলটি যুক্তরাজ্য সরকারকে জাতীয় নিরাপত্তা সমুন্নত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আরো বেশি ক্ষমতা দেবে। হুয়াওয়ের মতো ‘উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন’ ভেন্ডরদের সঙ্গে কাজ করার সময় কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়ে বৃহদাকার টেলিকম কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনাও দিতে পারবে সরকার।
কেবল হুয়াওয়ের মতো চীনা কোম্পানিই নয়, যেকোনো টেলিকম কোম্পানিই নতুন বিলটির অধীনে নিরাপত্তা নজরদারির আওতায় আসবে। সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধানে বারবার ব্যর্থ হলে একেকটি কোম্পানিকে প্রতিদিন ১ লাখ পাউন্ড পর্যন্ত জমিমানা গুনতে হতে পারে। নতুন এ আইনের প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছে যুক্তরাজ্যের কমিউনিকেশনস রেগুলেটর অফকম।
জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম হুয়াওয়ের ওপর খড়্গহস্ত হলেও ট্রাম্প প্রশাসন তার মিত্র দেশগুলোকেও একই নীতি অনুসরণের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। এ চাপ যুক্তরাজ্যের ওপরও ছিল। প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল দেশটির কোর নেটওয়ার্কের সংবেদনশীল অংশগুলো থেকে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলার। এছাড়া নন-কোর সিস্টেমে কোম্পানিটির সরঞ্জাম ব্যবহারও ৩৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এ নীতি অনুসরণের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল জনসন প্রশাসন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাপ বাড়তে থাকায় ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ ফাইভজি নেটওয়ার্ক থেকে হুয়াওয়ের কিট সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ সরকার। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য একটি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে যুক্তরাজ্যকে, যার পথ সুগম করে দেবে নতুন বিলটি।
যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল সেক্রেটারি অলিভার ডাওডেন বলেছেন, ‘ফাইভজি ও গিগাবিট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে আমরা শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছি। এ বিনিয়োগের পূর্ণাঙ্গ সুফল তখনই পাব, যখন আমরা আমাদের নেটওয়ার্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম হব। নতুন বিলটি যুক্তরাজ্যকে বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর টেলিকম সুরক্ষার আইনি কাঠামো দেবে, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারব।’
ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ড. ইয়ান লেভি বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় নেটওয়ার্ক ও অপারেটরদের জানতে হবে যে আমরা তাদের কাছে কী চাই। আমরা আসলে একটি মানদণ্ড স্থাপন করতে চাই। নতুন এ বিলের মাধ্যমে টেলিকম খাতে সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে কিছু নতুন শর্ত আরোপ করা হবে, যার মাধ্যমে অপারেটররা আরো ভালোভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারবে।’