কেমন হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট, কী কী কাজে ব্যবহার করা যাবে সেটি- সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী এপ্রিলের মধ্যে।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) বলছে, কী ধরনের হবে ‘বঙ্গবন্ধু-২’ স্যাটেলাইট, তা এপ্রিলের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এজন্য নিয়োগ করা হয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, যারা চলতি মাসেই কাজ শুরু করবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কী ধরনের স্যাটেলাইট কেনা হবে তা খুব দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে।
“২০২৩ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে দ্রুততার সাথে কাজ করা হচ্ছে,” বলেন মন্ত্রী।
বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, দেশের দ্বিতীয় এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ফ্রান্সের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইস-ওয়াটার হাউজ কুপারসের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
“পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্প্রতি প্রায় দুই লাখ মার্কিন ডলার মূল্যে এ চুক্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারিতেই কাজ শুরু করবে।”
আগামী মার্চের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে তাদের পরামর্শ উপস্থাপন করবে জানিয়ে বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান বলেন, “যোগাযোগের পাশাপাশি আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের সুযোগ রেখে স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানাবে কি ধরনের স্যাটেলাইট এসব কাজের জন্য সহায়ক হবে। এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
দেশের প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ একটি ‘জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন’ স্যাটেলাইট হওয়ায় কেবল যোগাযোগের কাজে লাগছে।
জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট ছাড়াও কমিউনেকশন, রিমোট সেনসিং, নেভিগেশন, জিওসেনট্রিক অরবিট টাইপ স্যাটেলাইট, পোলার স্যাটেলাইটসহ নানা কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্যাটেলাইট রয়েছে।
বিসিএসসিএল আগেই জানিয়ে আসছিল, দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট হবে ‘হাইব্রিড’ ।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সিস্টেমের নকশা তৈরির জন্য ২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’। এরপর এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তিতে স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনা হয় ফ্রান্সের কোম্পানি তালিস এলিনিয়া স্পেস থেকে।
২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালে কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে যাত্রা করে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ হয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী ৫৭তম দেশ।
উৎক্ষেপণের ছয় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণও সম্পূর্ণভাবে বুঝে পায় বাংলাদেশ।
সরকারের এ মেয়াদেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করে বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “সরকারের নিজস্ব খরচে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার পরই খুব দ্রুত সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় থাকব কোন ধরনের স্যাটেলাইট কেনা হবে।
“কোন ধরনের স্যাটেলাইট কেনা হবে তা নির্ধারণ করার পর এ বিষয়ে দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্রের পর বোঝা যাবে কোন দেশ আগ্রহ প্রকাশ করছে আর কোন দেশ থেকে এ স্যাটেলাইট আমরা কিনব।”
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না, কারণ সরকার এটিকে অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে রেখেছে।”
এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আগেরটির চেয়ে তুলনামূলক খরচ কম হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
একই কথা বলেছেন বিসিএসসিএল চেয়ারম্যানও।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে যে খরচ হয়েছিল এবার তার চেয়ে কম হবে জানিয়ে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এর গ্রাউন্ড স্টেশনসহ সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধা এখন রয়েছে। দ্বিতীয়টি উৎক্ষেপণের পর সেসব খরচ হবে না।”
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের দুই বছরের মাথায় নিজস্ব আয়ে চলা শুরু করেছে স্যাটেলাইট কোম্পানি। এই স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের।
ট্রান্সপন্ডার ভাড়া বাবদ আয় বাড়ছে জানিয়ে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বাণিজ্যিক পরিসর বাড়াতে ব্যাংক খাতে ইতিমধ্যে ডিবিবিএল এবং ইবিএলের সাথে চুক্তি হয়েছে। আগামীতে আয় আরও বাড়বে বলে আশা তার।