আপনারা হয়তো জানেন না আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি কোনটি। কোন ব্রান্ডের টাকা দিয়ে গোটা আমেরিকা চালানো সম্ভব, সেইসাথে বর্তমানে তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু রয়েছে টপ লেভেলে এবং মোবাইল বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এই সকল প্রশ্নের উত্তর একটাই ‘অ্যাপল’। শুধু তাদের স্মার্টফোনে নয় তাদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের গেজেট বাজারে বিক্রি করা হয় বিপুল চাহিদার মাধ্যমে।
দিনটা, ১৯৭৬ সালের পহেলা এপ্রিল। স্টিভ ওজনিয়েক, স্টিভ জবস এবং রোনাল্ড ওয়েন মিলে ‘অ্যাপল’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটা প্রতিষ্ঠা করার দ্বিতীয় বছরেই তারা তাদের প্রথম পণ্য বাজারে নিয়ে আসেন। সেই জিনিসটার নাম ছিল ‘অ্যাপল আই’। এটির ডাটা অ্যালগরিদম ডিজাইন থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কারিগরি দিক গুলো দেখেন স্টিভ ওজনিয়েক এবং প্রথম ডিজাইন তৈরি করেন রোনাল্ড ওয়েন। কম্পিউটার বিক্রি এবং বাজারজাতকরণের দায়িত্ব থাকে স্টিভ জবসের কাছে।
১৯৭৭ সালে ‘অ্যাপল ২’ কম্পিউটার বাণিজ্যিকভাবে তারা বাজারে নিয়ে আসে। যেটা তখনকার সময়ে সেরা একটি কম্পিউটার ছিলো। এরপরই আস্তে আস্তে এই ‘অ্যাপলে’র প্রতি লোকজনের চাহিদা বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালে তাদের সকলের প্রচেষ্টায় তারা বাজার আনতে সক্ষম হয় মাউস যুক্ত কম্পিউটার। এরপর তাদেরকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু হয়ে যায় তাদের একের পর এক সফলতা। বাজারে তারা একের পর এক নতুন পণ্য ছাড়তে থাকে। কিন্তু সবগুলোই ছিলো কম্পিউটার। তবে এ কম্পিউটারগুলোর তারা আপডেট করতে করতে নিয়ে আসে। ১৯৮৩ সালের পর ‘অ্যাপল’ কম্পিউটারের গ্রাফিক্স ডিজাইনের দিকে নজর দেয়। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪ সালে অ্যাপল নিয়ে আসে ‘মেকিনটোস’ কম্পিউটার। যেটাতে ছিল সম্পূর্ণ গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস। এই কম্পিউটারটি তৈরি হওয়ার পর থেকে সাধারণ যারা ইউজার রয়েছে তাদের কাছে কম্পিউটারের ধারণা বদলে যেতে শুরু করে। কিন্তু, সেই সেই সময়ে মাইক্রোসফট এর মত অনেক কোম্পানির কম দামে ভালো সফটওয়্যার যুক্ত ভালো কম্পিউটার থাকায় আস্তে আস্তে মার্কেট হারাতে শুরু করে ‘অ্যাপল’। তবে ব্যতিক্রমী কিছু পণ্যের কারণে ‘অ্যাপল’ পিছপা হয় না।
স্টিভ জবস ১৯৮৫ সালে ‘অ্যাপল’ থেকে রিজাইন দিয়ে নিজে একটি কোম্পানি খুলে, যেটির নাম রাখে ‘নেক্সট’। একই সময়ে তার আরেক বন্ধু স্টিভ ওজনিয়েকও ‘অ্যাপল’ থেকে সরে দাঁড়ান। এ কারণে ‘অ্যাপলে’র অবস্থা আরো খারাপ হতে শুরু করে। যাই হোক এ দু’জন ছাড়াই, ১৯৯১ সালে ‘অ্যাপল’ বাজারে নিয়ে আসে প্রথম কোন ল্যাপটপ। যেটির নাম ছিল পাওয়ার্বুক হ্যান্ডেড এবং এটি ডিজাইন তৈরি করেছিলো ‘সনি’৷ এরপর ১৯৯৩ সালে ‘অ্যাপল’ আবার পকেট কম্পিউটার হিসেবে বের করে ‘নিউ টন মেসেজ প্যাড’ পরের বছর খুব কম সময়ের জন্য নিয়ে আসে ‘কুইক টেক ১০০’ নামের একটি ক্যামেরা। এরপর ‘অ্যাপল’ নিয়ে আসে তাদের প্রথম পাওয়ার’পিসি।
১৯৯৭ সালে সে সময়ে থাকা অ্যাপলে’র প্রধান নিবার্হী পারেনি যে এভাবে অ্যাপল’কে ব্যবসায়িক বাজারে টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। অতঃপর স্টিভ জবসকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সে অ্যাপল’এর সিইও নির্বাচিত হন। সিইও’র দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই স্টিভ জবস অ্যাপলে’র অনেক বড় বড় পরিবর্তন নিয়ে আসেন। ১৯৯৮ সালে অ্যাপল ‘ম্যাকিনটোস’ বাদ দিয়ে বাজারে ‘আই ম্যাক’ ছাড়ে। এরপর পরই ছাড়া হয় ‘আই বুক’। এরপর আবারো আস্তে আস্তে সফলতার দিকে এগোতে শুরু করে ‘অ্যাপল’। ২০০১ সালে অ্যাপল তাদের পুরাতন অপারেটিং সিস্টেম বাদ দিয়ে নতুন অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসে ‘ওএস এক্স ১০’৷ সে সময়ে অ্যাপেল বাজারে উন্মুক্ত করে ‘আই পোড’। ২০০৬ সালে ‘অ্যাপল’ তাদের পুরনো পিসি প্রসেসর বাদ দিয়ে, আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী প্রসেসর নিয়ে তৈরি করে ‘ম্যাকবুক প্রো’ এবং ‘ম্যাক প্রো’। ২০০৭ সালে ‘অ্যাপল’ তাদের প্রথম স্মার্টফোন বের করে। যে স্মার্টফোনের নাম রাখা হয় ‘আইফোন’। এটি সেইসময়ের প্রথম ইউনিক টাচ স্ক্রিন মোবাইল ফোন ছিল। এরপর শুরু হয় অ্যাপলে’র রেকর্ড ভাঙ্গার সময়। সেই সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত টেকনোলজির বাজারে একের পর এক রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে ‘অ্যাপল’। বর্তমানে অ্যাপলের ব্র্যান্ড ভ্যালু টপ লেভেল এ রয়েছে। বর্তমানে স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে অবস্থান করছে ‘অ্যাপল’। মাইক্রোসফ্ট এবং গুগলে’র থেকেও হোক অনেক দামি একটি ব্র্যান্ড ‘অ্যাপল’। ইন্টার রেভিনিউ গ্রোথের দিক দিয়ে ‘আপল’ অন্যান্য অনেক কোম্পানি থেকে পিছিয়ে থাকলেও, নেট ইনকামের দিক দিয়ে ‘অ্যাপল’ রয়েছে সকল ব্র্যান্ডের উপরে।