জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভারে ঢুকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির তথ্য ঠিক রেখে পাল্টে ফেলা হতো ছবি। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনে তৈরি করা হতো ভুয়া টিন সার্টিফিকেট বা ট্রেড লাইসেন্স।
এসব ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক ঋণ তুলে পালিয়ে যেতেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ফ্ল্যাট কিংবা জমি কেনার জন্য ঋণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটের ঘটনায় ৬ জন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকা থেকে ডিবি মতিঝিল বিভাগের একটি টিম তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতাররা হলেন—বিপ্লব, আল আমিন ওরফে জামিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদ্যুত, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান।
বুধবার (০৩ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
প্রতারণার কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চক্রটি ফ্ল্যাট বা প্লট কেনা-বেচার কথা বলে মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো।
একইসঙ্গে ব্যাংকে গিয়ে তারা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ নেবে বলে জানাতো। পরবর্তীতে প্রতারক চক্র ফ্ল্যাটের মালিকের কাছ থেকে এনআইডি এবং ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে আসতো।
তারপর প্রতারকরা এনআইডি সার্ভারে ঢুকে ফ্ল্যাট মালিকের সব তথ্য হুবহু ঠিক রেখে ছবিটি পরিবর্তন করে নিতো। এর মাধ্যমে প্রতারকদের মধ্যেই কেউ ফ্ল্যাটের মালিক বনে যান। সার্ভারে পাল্টে দেওয়ার ফলে ব্যাংকের লোকরা এনআইডির ওয়েবসাইটে চেক করে সবকিছু সঠিক দেখতে পেতেন। ভুয়া ওই এনআইডি দিয়েই ভুয়া টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে ঋণের আবেদন করতেন।
সেই অনুযায়ী ব্যাংকের লোকজন প্রতারকদের অফিস পরিদর্শনে আসতেন। এদিকে ১-২ মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে সাজানো অফিস বানাতো প্রতারক চক্র। সেই অফিসে ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করা হতো। সবকিছু ঠিক থাকায় ব্যাংকও ঋণ দিয়ে দিতো। এরপর কিস্তি পরিশোধের সময় এলেই ওই অফিসে প্রতারকদের আর খুঁজে পাওয়া যেত না।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, ঢাকা ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চক্রটি আত্মসাৎ করেছে, এমন অভিযোগে পল্টন ও খিলগাঁও থানায় দুটি মামলা করা হয়। মামলার তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রথমে বিপ্লবকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, এনআইডি তৈরির সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশন অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীদের সহায়তায় চক্রটি সার্ভার থেকে এনআইডি পাল্টে ফেলতো। এমন ৪৪ জনকে নির্বাচন কমিশন বরখাস্ত করেছে বলে ইতোমধ্যে আমাদের জানিয়েছে। আমরা তাদের বিষয়ে যাচাই করে দেখছি।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, চক্রটির মূলহোতা আল আমিন ও খ ম হাসান। তারা তাদের অন্যান্য সহযোগীদের প্রয়োজন অনুয়ায়ী কখনও ক্রেতা আবার কখনও বিক্রেতা, কখনও জমির মালিক আবার কখনও ফ্ল্যাটের মালিক সাজতেন। আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মিডলম্যান হিসেবে কাজ করতেন। রেজাউল ইসলাম ও শাহজাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতেন।
এই প্রতারক চক্র অন্তত ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেছে জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আত্মসাতের খবর পেয়েছি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চক্রের সঙ্গে ব্যাংক কিংবা অন্যান্য কোনো সেক্টরের কেউ জড়িত আছে কিনা আমরা যাচাই করে দেখছি।