প্রকৃতি নারীকে অসীম ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছেন। যে যখন ছোট্ট সন্তান তখনই যেন মায়া ভরে পুরো পরিবারকে আগলে রাখতে পারে। কৈশোরের দুরন্তপনায় ছুটে বেড়াতে বেড়াতে জানান দিতে পারে তার কর্মচঞ্চল স্বভাবের ধরন।
কৈশোর পেরিয়ে নারী বৈবাহিক জীবনের বউ এর ভুমিকা নিয়ে আসে তখন নতুন একটি পরিবারকে আপন করে নিয়ে পরিবারের বড়দের মধ্যমনি, ছোটদের আগলে রাখা, বৃদ্ধদের সেবিকার মতো আগলে রাখা, পরিবারের সবার সুখ দুঃখের খেয়াল রাখা সেই ছোট মেয়েটি যেন হুট করেই বড় হয়ে যায় কয়েক গুন।
সেই বউ যখন মায়ের ভুমিকায় আসে তখন সে নতুন ভাবে পৃথিবীটাকে দেখতে শেখে। তার সন্তানের হাসি আনন্দের মাঝেই যেন নিজের জীবনের স্বার্থকতা খুজে পায়। নিজেকে একটি যোগ্য সন্তানের যোগ্য মা করতে যেয়ে তার বাকি জীবন পার হয়ে যায়৷
সেই দায়িত্ব সাথে নিয়েই নারী কখনো আপোষ করেনা তার নিজের দেখা স্বপ্ন গুলোকে পুরোন করতে। নিজের শিক্ষা, নিজের ইচ্ছে, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে নারী হতে পারে কোন কর্পোরেট জগতের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী আবার হতে পারেন ঘরে বসেই একজন আদর্শ অনুকরনীয় উদ্দ্যোক্তাও।
নারীকে একটি ছোট হৃদয়ের মাঝে দেয়া হয় পুরো বিশ্ব ধারনের ক্ষমতা। সে এক দিকে অন্যের মা বাবা পরিবারকে আপন করে নিয়ে সমান ভাবে নিজের মা-বাবা পরিবারেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা।
করোনা কালীন সময়ে যখন প্রতিটি কর্মখেত্র ছিল স্থবির নারীরা তখন এগিয়ে এসেছিলেন পরিবারের অর্থ উপার্জন করে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে। কথা হয় এমন কিছু নারীর সাথে যারা নিজেদের কর্মখেত্রে নিজের সাথে সাথে আরো ১০ জন নারীকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন নিজের মতো করে আগানোর জন্য৷
জামদানী রানী ক্ষ্যাত কাকলী রাসেল তালুকদার ক্যারিয়ারের একটি পর্যায়ে জব ছেড়েদিয়েছিলেন তার সন্তান পৃথিবীতে আসার পরেই কিন্তু তার অনুপ্রেরণা হয়েছিলেন আবার শুরু করার তার মা “আমার ছেলে শান আসার পরেই আমার জব ছেড়েদিলেও আমার মা কখনো চাইতেন না আমি ঘরে বসে থাকি, তাই তার সহযোগিতা ও পরামর্শ আর নিজের জামদানীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই শুরু করেছিলাম আমার কাকলী’স এটায়ার”
তিনি আরো জানান, ক্যারিয়ার এর প্রথম দিকে আমি খুব হতাশ থাকলেও আমার সৌভাগ্য আমি দেখা পেয়েছিলাম ই-ক্যাব এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ স্যারের। তাঁর পরামর্শ আমার কাকলী’স এটায়ার এর সফলতা আজকে অনুকরনীয় অনেকের কাছে। তাই জামদানী নিয়ে যে কোন উদ্দোগের পাশে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাই আমি
ঐতিহ্যবাহী আরেক পন্য খেশ শাড়িকে তুলে আনা টাংগাইলের কন্যা নিগার ফাতেমা, তিনি প্রথম টাংগাইলের খেশ পন্য নিয়ে আসেন ভিন্ন ভিন্ন আংগীকে, তার মতে ” আমি প্রথম কাজ শুরু করি টাংগাইলের শাড়ি ও শখের বশে বাটনা নিয়ে, এর পরে যখন খেশ নিয়ে লিখতে শুরু করলাম তখন দেখা গেল অনেকেই এই শাড়ির নাম প্রথম শুনছেন আমার মাধ্যেম! ” এই খেশ শাড়ির সাথে সাহিত্যের ও ইতিহাসের যে যোগসূত্র আছে তা তুলে আনার মাধ্যমেই খেশ এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেন তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি রাজিব আহমেদ এর পরামর্শ অনুযায়ী খেশ এর ভিন্ন ভিন্ন ফিউশান আনার মাধ্যমে এই পন্যের বাজার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন৷ খেশ এর শাড়ির সাথে সাথে ব্যাগ, চাদর তার সব চেয়ে জনপ্রিয় এই মুহুর্তে৷
প্রায় ৭ লক্ষ টাকা লস করে আবার নিজের ক্যারিয়ার এর সেরা সময় ফিরিয়ে এনে তাক লাগিয়েছেন কন্যা সুন্দরীর মনিকা আহমেদ, ” অনলাইন বিজনেস আর অফলাইন বিজনেস নিয়ে পার্থক্য ও পড়াশোনা না করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে যে লস বা ভুল আমি করেছিলাম তা আবার সঠিক সময়ে সিদ্ধান্তঃ পরিবর্তন এর মাধ্যমে বদলে দিতে পেরেছিলাম রাজিব আহমেদ ভাইয়ার দিক নির্দেশনা মেনে৷ ”
নিজস্ব প্রোডাকশন ও ডিজাইনের কারনে দেশীয় তাতের শাড়ি গুলোকে তিনি দিয়েছেন ভিন্নতা এনেছেন শুভ্রতায় আভিজাত্য৷ তিনি মনে করেন আমাদের প্রত্যেকের ক্যারিয়ার শুরুর আগেই সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন, তাতে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহনের হার অনেক কমে যায়।
স্কুল বন্ধ থাকলেও নিজের নেশাকে পেশায় পরিনত করে আরো দশজন কলিগের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন সুমি ” আমি রান্না করতে ভালোবাসি, খাওয়াতে ভালোবাসি, করোনার মধ্যে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি শুরু করে দেই সেই ভালোবাসাকেই পেশা হিসেবে নিয়ে নতুন ক্যারিয়ার করার, আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার অনেক কলিগ রাই অনলাইন ভিত্তিক কাজ শুরু করেছেন বাসায় বসে না থেকে৷
ক্যান্সার কি হার মানার জন্য? একদমই না। শারমিন মৌসুমি দুই ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জননী অনেকের উদ্যোগের ভালোলাগা দেখে নিজেও নিজের ভালো লাগাকে সামনে নিয়ে আসেন৷ রান্নার মাধ্যমে জয় করেন অনেকের মন। ” প্রথম দিকে ডেলিভারিতে সমস্যা হলেও এখন সব কিছুই সহজে করতে পারি, আমি শুধু জীবনের জন্য নিজের জন্য কিছু করতে চাই৷ কারন অসুস্থতার কাছে নিজেকে হারাতে চাইনা। কারন আমি জানি আমি পারবোই।
ঘরে বসে না থেকে শুরু করি ইলিশ নিয়ে কাজ করা! রোকেয়া প্রীতি যেন স্রোতের বিপরীতে হেটে কাজ শুরু করেন মাছ নিয়ে। শশুরবাড়ি চাদপুর হবার সুবাদে প্রতিনিয়ত যাওয়া আসাকে একটি সম্ভাবনা খুজে পান তিনি। ঢাকায় ঘরে বসেই উনি শুরু করেন ইলিশ নিয়ে কাজ৷ নিজস্ব ডেলিভারি ম্যান নিয়ে একদম সরাসরি চাদপুর থেকে ইলিশ এনে পৌঁছে দেন উনি ক্রেতাদের বাসায় এদকম পরিচ্ছন্ন ভাবে রেডি করে দিয়ে।
এমন হাজারো উদ্দ্যোক্তার গল্প তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন আর প্রতিটি উদ্যোগ তাদের সন্তানের মতো যাদের তারা লালন করেন ধারন করেন মনে। পরিবার পরিজন এর সাপোর্ট, ভালোবাসা, ভরশা তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বলেই আজকে তারা প্রত্যেকেই সফল নারী উদ্দ্যোক্তা।
“নারীরা যেখানেই থাকুন না কেন তাদের উচিত সব সময় নিজের ক্যারিয়ার ও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখা” বলছিলেন ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ, তিনি আরো বলেন ” ই-কমার্স এর যুগে যে কোন মেয়েই পারেন তার উপার্জন এর পথ তৈরি করে নিতে যদি তার মাঝে শেখার বা জানার আগ্রহ থাকে”