করোনা মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে যখন বিশ্ব অর্থনীতি সচল হওয়ার চেষ্টায় আছে, তখন গুরুত্বপূর্ণ চিপ স্বল্পতায় বেশির ভাগ খাতেই কাঙ্ক্ষিত পুনুরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবহন থেকে শুরু করে বিনোদন—সব খাতেই অনুভূত হচ্ছে চিপ স্বল্পতার প্রভাব। খবর এপি।
গত গ্রীষ্মের শেষ থেকেই চিপ নির্মাণের এ ঘাটতি বৈশ্বিক বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এর ফলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের শেখার সুবিধার্তে ল্যাপটপ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও অ্যাপলের আইফোন ১২ বাজারজাতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে প্লে-স্টেশন ৫ কেনার ক্ষেত্রে গেমারদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সমস্যা আরো বাড়ছে। বিশেষ করে গাড়ি নির্মাণ শিল্পে এর প্রভাব বেশি পড়ছে। চিপ সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আধুনিক গাড়িগুলোর ফিনিশিং কাজ সম্পন্ন করতে পারছে না। সম্প্রতি সুয়েজ খালে একটি পণ্যবাহী জাহাজ প্রায় এক সপ্তাহের কাছাকাছি আটকে ছিল। এর ফলে এশিয়া থেকে ইউরোপে চিপের যে চালান পাঠানো হয়েছিল, সেটিও আটকে ছিল। এ ধরনের অপ্রত্যাশিত বাধার ফলে গ্রাহকরা তাদের প্রত্যাশিত গাড়ি ক্রয় থেকে বঞ্চিত হন। কিংবা পছন্দের মডেলের চেয়ে একধাপ নিচের মডেল কিনতে বাধ্য হন, যেখানে তাদের পছন্দের ইলেকট্রিক ফিচার থাকে না। এর ফলে গাড়ি নির্মাণ শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথমদিকে যার পরিমাণ ৬ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।
বেয়ারড টেকনোলজির বিশ্লেষক টেড মর্টনসন জানান, আমরা এমন এক ঝড়ের মুখে পড়েছি, যেখান থেকে খুব সহজে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি আরো বলেন, চিপ নির্মাণ খাতে ৩০ বছরের ইতিহাসে তিনি এ ধরনের কোনো সংকট দেখেননি।
সংকটের জন্য কী করোনাই দায়ী
পুরোপুরি না হলেও চিপ নির্মাণ স্বল্পতার পেছনে করোনার প্রভাব রয়েছে। করোনার কারণে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত সময়ের আগেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হতো। বিশেষ করে দেশের বাইরে যেসব কারখানায় অধিকাংশ প্রসেসর তৈরি করা হতো, সেগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে। করোনার সংক্রমণ কমার পর কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও আগের অর্ডারের কারণে নতুন করে বেশি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।
অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কি কাজ করছে
সনি ও মাইক্রোসফট বহুল প্রতীক্ষিত কিছু গেমিং কনসোল বাজারজাতের অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে সনির প্লে-স্টেশন এবং এক্সবক্স অন্যতম। যেগুলোর নির্মাণে আরো উন্নতমানের চিপের প্রয়োজন। যেসব প্রতিষ্ঠান তারবিহীন নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে থাকেন তারা ফাইভজি প্রযুক্তির সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিতে ভালোমানের চিপের জন্য অপেক্ষা করছে।
গাড়ি নির্মাণ শিল্পেই বেশি প্রভাব কেন
করোনার সময় ঘরে অবস্থানের জন্য সরকারি নির্দেশনা গ্রাহক পর্যায়ে ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রিতে প্রভাব ফেলে। যার ফলে অটো পার্টস সবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিপ সংকটের কারণে গ্যাস প্যাডেল, ট্রান্সমিশন, টাচ স্ক্রিনসহ অন্যান্য অংশ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছিল।
বর্তমানে গাড়ি নির্মাণ শিল্পের অবস্থা কী
চিপ সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য রফতানি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কারখানাগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। এ সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফোর্ড, জেনারেল মোটরস, ফিয়াট ক্রাইসলার (বর্তমানে স্টেলান্টিস), ফক্সওয়াগন ও হোন্ডা। তবে টয়োটা সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
যারা নতুন গাড়ি কিনতে চাচ্ছেন তাদের ওপর এর প্রভাব কতটুকু
তাদের আরো বেশি খরচ করতে হবে। কেননা চিপ সংকটের আগে করোনা মহামারী কারণে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত মডেলের গাড়ি তৈরি করতে পারেনি। আইএইচএস মারকিটের তথ্যানুযায়ী, চিপ সংকটের কারণে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত উত্তর আমেরিকায় গাড়ির উৎপাদনের মোট সংখ্যা এক লাখ কমে গেছে।
গ্রাহকদের পছন্দের পণ্যেও কী এর প্রভাব পড়বে
বিশ্বের অন্যতম চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স জানায়, চিপ সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটির ইলেকট্রিক পণ্য সরবরাহের বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তবে ঠিক কোন ধরনের পণ্যে এর প্রভাব পড়বে সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। তবে স্যামসাংয়ের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কোহ ডং জিন কোম্পানির অংশীদারদের জানান, চিপের উৎপাদন ও সরবরাহের চরম অসামঞ্জস্য ও ঘাটতির কারণে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পণ্যের বাজার খুবই খারাপ অবস্থায় থাকবে।