বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রবর্তনের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি-উইসিস/ডব্লিউএসআইএস উইনার পুরস্কার-২০২১’ অর্জন করেছে বাংলাদশ। প্রকল্পটির উদ্যোগ ও তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি) প্রকল্পটি বিটিআরসি’র তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশের প্রথম সারির আইসিটি সেবা প্রদানকারি সংস্থা “সিনেসিস আইটি লিমিটেড” সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরি থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ সহ সার্বিক কারিগরি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৮ মে) আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রাপ্তির পর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সিবিভিএমপি প্রকল্পটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (উইসিস/ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার-২০২১ প্রতিযোগিতার অ্যাকশন লাইন সি-ফাইভ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। অ্যাকশন লাইন সি-ফাইভের মূল প্রতিপাদ্য— বিল্ডিং কনফিডেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ইন ইউজ অব আইসিটিস। এছাড়াও উইসিস/ডব্লিউএসআইএস ফোরামের প্রধান লক্ষ্য হলো— উন্নয়নশীল বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি করে ধনী-দরিদ্র দেশগুলোর মাঝে ডিজিটাল বিভাজন দূর করা।
উইসিস/ডব্লিউএসআইএস-এর প্রতিযোগিতায় সরকারি, বেসরকারি, সাধারণ নাগরিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প জমা দেওয়ার পাশাপাশি উইসিস/ডব্লিউএসআইএস-এর অংশীদাররাও এতে অংশ নেয়। এতে বিভিন্ন দেশের মোট ৯০ টি প্রকল্পের এর মধ্য থেকে ১৮ টি ক্যাটাগরিতে ১৮ টি প্রকল্পকে চূড়ান্ত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিটিআরসি চলতি বছরই প্রথম এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। সিবিভিএমপি প্রকল্পটি ১৫ হাজারের বেশি ভোট পায়।
মুঠোফোনের নানা অপরাধ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতেই সিনেসিস আইটির সার্বিক সহযোগিতায় বিটিআরসি নিয়ে আসে সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি)। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী আন্তর্জাতিক মানের এই সিস্টেমের ফলে বিশ্বের কাছে হয়ে উঠেছে রোল মডেল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জিরো ডাউনটাইমের মাধ্যমে সিবিভিএমপি পরিচালনা, তত্ত্বাবধায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করেছে দেশের প্রথম সারির আইটি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি। বর্তমানে যার আপটাইমও ৯৯.৯৯% উপরে। প্রকল্পটির অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকল্পটি পরিদর্শনের জন্য বিআরটিসি’র কাছে আবেদনও করে।
সিনেসিস আইটি লিমিটেড-এর গ্রুপ সিইও – জনাব রুপায়ন চৌধুরী বলেন, “দেশের প্রতিটা মোবাইল কোম্পানির অক্লান্ত পরিশ্রম ও সার্বিক সহযোগিতায় এবং বিটিআরসি’র নেতৃত্বে আমরা এই চ্যালেঞ্জটা সহজেই জয় লাভ করতে পেরেছি। যার ফলে সারা পৃথিবীতে আজ সিবিভিএমপি একটি আদর্শ। মোবাইল আইডেন্টিটি সলিউশনের কথা আসলে সবার আগে আসে বাংলাদেশ, যেটি আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এছাড়াও সিবিভিএমপি সিস্টেম আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি আমাদের অহংকারের এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ সক্ষমতার আরেক প্রতীক।”
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে আছেন সিনেসিস আইটি’র মহাব্যবস্থাপক এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামো বিভাগের প্রধান- জনাব আমিনুল বারী শুভ্র, তার মতে, “এরকম একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্তপূর্ণ প্রকল্পের জন্য দেশীয় কোম্পানির উপর আস্থা রাখা নিঃসন্দেহে সিনেসিস আইটির জন্য ছিলো অনেক বড় একটা সুযোগ। সিনেসিস আইটি সেই সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আমি বলব, সিবিভিএমপি পাবলিক প্রাইভেট সহযোগিতামূলক প্রকল্পের সফলতার অনন্য উদাহরণ। বিটিআরসি’র উদ্যোগ এবং সঠিক নির্দেশনা এবং মোবাইল অপারেটরদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্যই প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। সবচে বড় যে উদাহরণ’টি তৈরী হয়েছে সেটি হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে দেশীয় প্রযুক্তির সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।”
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এর আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সফল উদ্যোগের জন্য ‘দ্য আইটিইউ টেলিকম ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ সার্টিফিকেট এপ্রিসিয়েশন’ পুরস্কার লাভ করে সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি) প্রকল্পটি।