বাংলাদেশ থেকে যারা উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিদেশ যেতে চাইছেন বা বর্তমানে বিদেশে কর্মরত আছেন তাদের শ্রম অভিবাসনে প্রতারণা বা ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে চালু হয়েছে ‘সেইফস্টেপ’ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন।
শ্রম অভিবাসন নিয়মতান্ত্রিক, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সেইফস্টেপ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটিকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দিয়ে সাজিয়েছে। যেগুলো হলো; প্রোফাইল (Profile), অভিবাসন সম্পর্কিত প্রস্তুতি তালিকা (Migration Checklist), ক্যালকুলেটর (Calculator), ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ (e-Learning) ও সহায়তা কেন্দ্র (Help Center)।
প্রোফাইল (Profile):
এই অপশনে একজন অভিবাসী কর্মী তার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির অভিজ্ঞতা, কাজের দক্ষতা- ইত্যাদি যোগ করে একটি সম্পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত (Curriculum Vitae) তৈরি করতে পারবেন। যা অভিবাসী কর্মীকে তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অনুযায়ী বিদেশে চাকরি পেতে সহায়তা করবে।
অভিবাসন সম্পর্কিত প্রস্তুতি তালিকা (Migration Checklist):
অভিবাসন সম্পর্কিত প্রস্তুতি তালিকার পাতায় একজন অভিবাসী কর্মী তার বিদেশে যাওয়া সম্পর্কিত পনেরো ধরনের কাগজপত্র এবং অতি প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি, যেমন – পাসপোর্ট, সাব-এজেন্ট/এজেন্সির সঙ্গে চাকরি, বেতন, খরচ বিষয়ে মৌখিক চুক্তির রেকর্ড, ভিসা, চাকরির চুক্তিপত্র, টাকা লেন-দেনের রেকর্ড- ইত্যাদির সফট কপি/অডিও-ভিডিও ক্লিপ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
ভবিষ্যতে কেউ বিদেশে গিয়ে অনিয়মিত (Undocumented) হলে এখানে রাখা সফট কপি ব্যবহার করে সেসব কাগজপত্র উদ্ধার করা যাবে। আবার সাব-এজেন্ট/এজেন্সি কর্তৃক প্রতারিত হলে এসব ডক্যুমেন্ট ব্যবহার করে আইনি প্রতিকার চাইতে পারবেন।
ক্যালকুলেটর:
অ্যাপটির ক্যালকুলেটর (Calculator) অপশন ব্যবহার করে হাতে-কলমে আর্থিক লাভ-ক্ষতি হিসাব করে জেনে-বুঝে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে একজন অভিবাসী কর্মী কত টাকা খরচ করে বিদেশে যাবেন, কত টাকা বেতন পাবেন, ঋণ করলে সুদসহ তা পরিশোধ করতে কত টাকা লাগবে, এবং সব খরচ বাদ দিয়ে কত টাকা দেশে পাঠাতে পারবেন- ইত্যাদি হিসেব করে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশনা পাবেন।
ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ:
ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ (e-Learning) পাতায় থাকা ভিডিও থেকে কী কী বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, লাভ-ক্ষতি হিসেব কীভাবে করতে হবে, নিরাপদ অভিবাসনের কী কী প্রস্তুতি রয়েছে, বিদেশে নারী ও পুরুষ অভিবাসী কর্মির কী কী ঝুঁকি রয়েছে, অভিবাসনের বিভিন্ন ধাপে বিপদে পড়লে বাঁ ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীভাবে কোথায় সহায়তা চাইতে হবে- ইত্যাদি বিষয়ে জানা যাবে।
সহায়তা কেন্দ্র:
সেইফস্টেপ অ্যাপ্লিকেশনে সহায়তা কেন্দ্র (Help Centre) শিরোনামে একটি চ্যাটবক্স সংযোজন করা হয়েছে। একজন অভিবাসী কর্মী অভিবাসনের বিভিন্ন ধাপে প্রয়োজনীয় যেকোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে বা কোনো প্রতারণা, নির্যাতন, নিপীড়ন বা শোষণের শিকার হলে জরুরি সহায়তা চাইতে সেইফস্টেপ অ্যাপ্লিকেশনের সহায়তা কেন্দ্র (Help Center) অপশনটি ব্যবহার করবেন।
সহায়তা কেন্দ্র (Help Center)’- চ্যাটবক্সটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এসব প্রশ্নের জবাব দেবে। জরুরি সহায়তার ক্ষেত্রে ‘সহায়তা কেন্দ্র (Help Center)’- চ্যাটবক্সটি অভিবাসী কর্মীকে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
সেইফস্টেপ অ্যাপে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি- তিনটি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহারকারীরা অ্যাপটির ‘সেটিংস’ (‘Settings’) পাতায় গিয়ে সুবিধামতো ভাষা নির্বাচন করা, ‘নাইট মোড’ (‘Night Mode’) ব্যবহার করা, গোপনীয়তা নীতি পরিবর্তন, অ্যাপটিকে শেয়ার করা, রেটিং দেয়া- ইত্যাদি করতে পারবেন।
অ্যাপটি ডাউনলোড করতে গুগল প্লে- স্টোরে গিয়ে SAFESTEP লিখে সার্চ করে অথবা এখানে ক্লিক করলে পাওয়া যাবে।
সেইফস্টেপ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতা সংস্থা- ফরেইন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপম্যান্ট অফিসের (এফসিডিও) অর্থায়নে জিফেমস পরিচালিত ‘মডার্ন স্লেভারি’ প্রকল্পের অধীনে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি তৈরিতে গবেষণা ও কারিগরি কার্যক্রম সম্পাদন করেছে এলেভেট হংকং হোল্ডিংস লিমিটেড, ডিজিনেক্স সল্যুশন ও উইনরক ইন্টারন্যশনাল।
যেকোনো অভিবাসী কর্মী বা তার পক্ষে তার পরিবারের কোনো সদস্য তার স্মার্টফোনে সহজেই সেইফস্টেপ অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। সেইফস্টেপ অ্যাপ্লিকেশনটি অভিবাসী কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে নিয়মতান্ত্রিক, সহজ ও নিরাপদ করতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হয়ে থাকবে।
লেখক: আকিব আনোয়ার, কমিউনিটি মবিলাইজেশন ম্যানেজার, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল।