কয়েক বছর আগেও স্মার্টওয়াচ নিয়ে প্রযুক্তি জগতে তেমন শোরগোল ছিল না। কিন্তু বর্তমানে বাজারে বেশকিছু স্মার্টওয়াচ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং প্রায় সব স্মার্টফোন ও প্রযুক্তি কোম্পানি এ সেগমেন্টের দিকে নজর দিচ্ছে। তার মধ্যে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে বেশকিছু স্মার্টওয়াচ নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তবে এখনো অনেকে ভাবেন যে স্মার্টওয়াচ ক্রয় করা কি উচিত হবে? এ দ্বিধাদ্বন্দ্বে যেন না পড়তে হয়, সেজন্য স্মার্টওয়াচ কেনার আগে বেশকিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়া প্রয়োজন—
স্মার্টওয়াচের প্রাথমিক তথ্য
যেকোনো স্মার্টওয়াচ কেনার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেগুলো হচ্ছে স্মার্টফোনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা, দাম ও ব্যাটারি কোয়ালিটি।
কম্প্যাটিবিলিটি বা সামঞ্জস্যতা
অ্যাপলের স্মার্টওয়াচ শুধু আইফোনের সঙ্গেই ব্যবহার করা যায়। যেখানে ওয়্যার ওএস ডিভাইসগুলো আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড দুই জায়গাতেই ভালোভাবে চলে। স্যামসাং, গারমিন, ফিটবিট, হুয়াওয়ের স্মার্টওয়াচগুলোও দুটি প্লাটফর্মেই ব্যবহারযোগ্য। এজন্য স্মার্টওয়াচ অ্যাপ ইনস্টল করতে হয়।
দাম
সবচেয়ে ভালো স্মার্টওয়াচের দাম ১৭ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে। তবে সবার পক্ষে এত দাম দিয়ে স্মার্টওয়াচ কেনা সম্ভব হবে না। বাজেট স্মার্টওয়াচের দাম সাড়ে ৮ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকার মধ্যে। ভালো স্মার্টওয়াচগুলোয় আধুনিক ফিটনেস ট্র্যাকার, মিউজিক ও যোগাযোগের অন্যান্য সুবিধা থাকে।
ব্যাটারি ক্ষমতা
স্মার্টওয়াচ ব্যবহারকারীদের কাছে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং এ নিয়ে অভিযোগেরও শেষ নেই। তবে বর্তমানে এ সমস্যার সমাধান এসেছে। অ্যাপলের স্মার্টওয়াচগুলো আপনাকে দুদিন ব্যাটারি ব্যাকআপ প্রদান করবে। এছাড়া যেসব স্মার্টওয়াচে স্ন্যাপড্রাগন ওয়্যার ৩১০০ প্রসেসর ব্যবহার করা হচ্ছে, সেসব স্মার্টওয়াচের ব্যাটারি একবার ফুল চার্জে টানা পাঁচদিন চলতে সক্ষম। কিছু স্মার্টওয়াচে ফাস্ট চার্জিং সুবিধাও দেয়া হচ্ছে এখন। ওয়ানপ্লাসের স্মার্টওয়াচ অর্ধেক চার্জ হতে মাত্র ১০ মিনিট সময় লাগে।
স্মার্টওয়াচের কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে
ফিটনেস ট্র্যাকিং
ফিটনেস ও দৈনন্দিন কাজের রেকর্ড রাখার সুবিধা থাকায় মানুষ স্মার্টওয়াচ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। ভালো স্মার্টওয়াচ আপনার পথচলা, ক্যালরি খরচের পরিমাণ, ব্যায়ামের সময়, হার্টরেটসহ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য আপনাকে জানাবে। কিছু স্মার্টওয়াচে জিপিএস সুবিধা থাকায় সকালের জগিং কিংবা বাইক চালানোর সময় সহজেই ম্যাপ দেখা যায়। এছাড়া অধিকাংশ স্মার্টওয়াচই এখন পানিরোধী সুবিধাসংবলিত।
মিউজিক বা গান
আপনার স্মার্টওয়াচ শুধু আপনার প্রাত্যহিক ব্যায়ামের রেকর্ডই রাখে নাকি সেই সঙ্গে পছন্দের গানও পরিবেশন করে তা মাথায় রাখতে হবে। অধিকাংশ স্মার্টওয়াচ গান সেভ করার সুবিধা দেয়। যে কারণে আপনি সহজেই ওয়্যারলেস ইয়ারফোন বা ইয়ারবাড ব্যবহার করে গান শুনতে পারবেন। যেসব স্মার্টওয়াচে মিউজিক স্টোরেজ নেই সেগুলোয় মিউজিক কন্ট্রোল সেটিংস থাকে। এতে গান পরিবর্তনের জন্য আপনাকে বার বার ফোন বের করতে হবে না।
এনএফসি
অনেক স্মার্টওয়াচে এনএফসি সুবিধা আছে, ফলে আপনি সহজেই মানিব্যাগ ছাড়াই কেনাকাটা করে বিল পরিশোধ করতে পারবেন। আপনার ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ডের তথ্য সেভ করার মাধ্যমে আপনি এ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে একেক প্রতিষ্ঠানের স্মার্টওয়াচ একেক ধরনের পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে।
যোগাযোগ
স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে সহজেই স্বাভাবিক যোগাযোগের কাজ করা যায়। যেমন এতে অ্যাপ এলার্ট, টেক্সট রিপ্লাই, ফোনকলের জবাব দেয়ার মতো সুবিধা থাকে। অ্যাপ এলার্টের মাধ্যমে আপনিও সহজেই কোন নোটিফিকেশনগুলো প্রয়োজনীয় সেগুলো দেখে নিতে পারবেন। বার বার ফোন বের করতে হবে না। যেসব স্মার্টওয়াচে এলটিই সুবিধা আছে, সেগুলো দিয়ে আপনি ফোনকলও করতে পারবেন। স্মার্টফোন বন্ধ থাকলেও কল করা যাবে। কিছু স্মার্টওয়াচে মেসেজের শর্ট রিপ্লাই প্রদান করার সুবিধাও থাকে।
উপরোক্ত বিষয়ের পাশাপাশি স্মার্টওয়াচ নির্বাচন ও ক্রয় করার ক্ষেত্রে পছন্দ এবং প্রয়োজনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ নিত্যদিনের জীবনযাপনে এ স্মার্টওয়াচ আপনাকে অনেক কাজেই সুবিধা এনে দেবে।
সূত্র: গ্যাজেটস নাউ