সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি৭-এর গৃহীত আন্তর্জাতিক করনীতিকে সমর্থন জানিয়েছে ফেসবুক ও গুগল। জি৭-এর সম্মেলন শেষে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর বৈশ্বিক ১৫ শতাংশ করপোরেট কর আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এমন প্রতিক্রিয়া জানায় প্রতিষ্ঠান দুটি।
গতকাল ফেসবুকের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান নিক ক্লেগ জানান, ন্যূনতম কর নির্ধারণের ব্যাপারে জি৭-এর সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতি ফেসবুক সমর্থন জানায়। এ সিদ্ধান্তের ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আরো বেশি কর দিতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ কর প্রযোজ্য হবে।
এক টুইটার বার্তায় ক্লেগ জানান, ফেসবুক আরো আগে থেকেই বৈশ্বিক করনীতি সংস্কারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল। জি৭-এর দ্বারা এ-সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকে আমরা স্বাগত জানাই।
ক্লেগ আরো বলেন, কর ব্যবস্থা নিয়ে এ চুক্তি বৈশ্বিক শুল্ক ব্যবস্থায় ব্যবসায়ের নিশ্চয়তা ও জনগণের আস্থা বৃদ্ধির প্রতি একটি উল্লেখযোগ্য প্রাথমিক ধাপ। আমরা চাই, আন্তর্জাতিক শুল্ক পরিমার্জন প্রক্রিয়া সফল হোক। এ ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ফেসবুককে আরো বেশি কর দিতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি (অর্থমন্ত্রী) জেনেট ইয়েলেন বলেন, জি৭-এর গৃহীত বৈশ্বিক ন্যূনতম করহারের আওতায় অ্যামাজন ও ফেসবুককে আসতে হবে।
গতকাল এক যৌথ বিবৃতিকে জি৭ভুক্ত দেশের অর্থমন্ত্রীরা জানান, বৃহৎ আকারের এবং বড় অংকের মুনাফা অর্জনকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যাতে কর এড়িয়ে যেতে না পারে, সে ধরনের সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর চেয়ে অ্যামাজন স্বল্প মুনাফাজনক কোম্পানি হওয়ার ফলে আশঙ্কায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থাটির ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত কর থেকে রেহাই পেতে পারে অ্যামাজন।
তবে গতকাল গুগল জানায়, নতুন প্রস্তাবিত করনীতির সঙ্গে সহযোগিতা করতে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এক বিবৃতিকে গুগলের মুখপাত্র জোস কাস্তেনেদা বলেন, হালনাগাদকৃত আন্তর্জাতিক শুল্কনীতিকে আমরা সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি। আমরা আশা করছি দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে শিগগরিই একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী পরিপূর্ণ চুক্তিতে আসতে পারবে।
এর আগে শনিবার করপোরেট কর প্রদানে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের শিল্পোন্নত সাতটি (জিসেভেন) দেশ। চূড়ান্ত চুক্তিসংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শিল্পোন্নত সাতটি দেশের অর্থমন্ত্রীরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ কর দেবেন। সেই সঙ্গে বিশ্বে জলবায়ুগত পরিবর্তনের পেছনে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাব কেমন সে ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের আরো সহজভাবে তথ্য প্রদান এবং বিনিয়োগের যথার্থ ক্ষেত্র নির্বাচনের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যদিকে জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ স্কোলজ বলেন, ওয়াশিংটন থেকে ১৫ শতাংশ করের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেটি কভিড-১৯ মহামারী থেকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান যাতে করের বাইরে থেকে না যায়, সেজন্য নতুন পদক্ষেপ কিংবা নিয়ম প্রয়োগ করা জরুরি।
তিনি আরো বলেন, করপোরেট কর প্রদান নিয়ে বর্তমান বিশ্বে যে চিত্রের সৃষ্টি হয়েছে, সেটি বন্ধে করের হার নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। বিশেষ করে করোনা মহামারী-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি অর্থনীতির সুরক্ষায় আমরা যে বিনিয়োগ করেছি সেগুলোর জন্য হলেও এটি জরুরি।