প্রযুক্তি বাজারে বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচ্য বিষয় চিপ স্বল্পতা। এ কারণে স্মার্টফোন, কম্পিউটার থেকে শুরু করে গাড়ি উৎপাদন শিল্পে বিরূপ প্রভাবের পাশাপাশি উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে এ সংকট গৃহস্থালি পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী সংকট অবসানের আগে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানগুলো চিপের উৎপাদন স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি গ্রীষ্মের মধ্যে পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। কিন্তু জুনের শেষে এসেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন পণ্য উন্মোচন ও হলিডে শপিং শুরু হলে এ সংকট আরো গুরুতর হবে বলে আশঙ্কা করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
জন ডেরের প্রধান প্রযুক্তিবিদ জাহমি হিন্ডম্যান বলেন, ছয়-সাত মাস আগে আমরা সবাই ভেবেছিলাম এ সংকট বেশিদিন থাকবে না। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে এ সমস্যা আরো ১২-১৮ মাস থাকবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ইন্টেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্যাট গেলসিঙ্গার বলেন, স্বল্পতার প্রভাব শুধু ট্রাক্টির কিংবা ট্রাকের ওপর পড়েনি। উৎপাদন স্বাভাবিক হতে আরো দুই বছরের বেশি সময় লাগবে।
এএমডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডা. লিসা সু জানান, চিপ স্বল্পতার কারণে স্বল্পমূল্যের যন্ত্রাংশের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের চিপ নির্মাণের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
চিপ স্বল্পতার ব্যাপারে এক বিবৃতিতে সনির প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা হিরোকি টটোকি বলেন, আমরা যদি আমাদের ডিভাইসগুলো সংরক্ষণ করি এবং আগামী বছর আরো বেশি প্লেস্টেশন ফাইভ উৎপাদন করি, তবু বাজারের চাহিদা পূরণ হবে না।
অন্যদিকে গত কয়েক সপ্তাহ পর গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটের (জিপিইউ) দাম কমতে শুরু করেছে। মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বন্ধে চীন সরকারের কঠোর অবস্থান এবং বিটকয়েনের মূল্য কমায় জিপিইউর চাহিদা কমছে।
অন্যদিকে পুরনো চিপের সরবরাহেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফোর্ডের ট্রাক কিংবা জন ডেরের ট্রাক্টরে টিএসএমসি কিংবা স্যামসাংয়ের ৫ ন্যানোমিটারের উন্নত চিপ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এখানে কম মূল্যের পুরনো চিপ ব্যবহার করা হয়। গাড়ি উৎপাদন খাতে চিপ স্বল্পতার প্রভাব থাকায় বর্তমানে কিছু প্রতিষ্ঠান নেভিগেশন সিস্টেম ও অতিরিক্ত ডিসপ্লে প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
চিপ সংকটের পেছনে আরো একটি বিষয় জড়িত। সেটি হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা। প্রযুক্তি বাজারে উচ্চমানসম্পন্ন চিপের চাহিদা থাকলেও এসব চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি বিশ্বের মোট ৯২ শতাংশ এবং স্যামসাং বাকি ৮ শতাংশ চিপ উৎপাদন করে। এছাড়া টিএসএমসি বিশ্বের গাড়ি উৎপাদন শিল্পের জন্য ৬০ শতাংশ চিপ সরবরাহ করে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন যদি ব্যাহত হয় তখন অন্য কোনো মাধ্যম থেকে এ বিপুল পরিমাণ চিপ পাওয়া সম্ভব নয়।
টিএসএমসি, ইন্টেল, স্যামসাংসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চিপ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন কারখানা স্থাপনের কাজ করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে চিপ উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তবে এসব উদ্যোগ পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হতে কয়েক বছর না হলেও কয়েক মাস সময় লাগবে।