বিশ্বের প্রথম ‘থ্রিডি প্রিন্টেড স্টিল ব্রিজ’ জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে অবস্থিত সেতুটি দিয়ে এখন থেকে পথচারী এবং সাইক্লিস্টরা চলাচল করতে পারবেন।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ১২ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মানে চার হাজার পাঁচশ’ কিলোগ্রাম স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে নির্মানকাজের সিংহভাগের কৃতিত্ব দিতে হবে বর্তমান রোবটিক্স প্রযুক্তিকে। টানা ছয় মাস ধরে ওয়েল্ডিং মেশিন ব্যবহার করে প্রিন্টিং এর কাজ করেছে একাধিক রোবটিক আর্ম বা যান্ত্রিক হাত।
সেতুর উদ্বোধন করেছেন নেদারল্যান্ডসের রাণী ম্যাক্সিমা। উদ্বোধনী ফিতা কাটার সময়েও কাঁচি নিয়ে রাণীর সঙ্গে ছিলো একটি রোবটিক হাত।
সবমিলিয়ে সেতু তৈরিতে সময় লেগেছে চার বছর। ইমপেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন এবং ডাচ প্রতিষ্ঠান এমএক্স৩ডি কাজ করেছে এ প্রকল্পটিতে। ইমপেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডনের ওয়েবসাইটে উল্লেখিত তথ্য অনুসারে, একেবারে শুরু থেকে সেতুটি স্থাপন পর্যন্ত গবেষণা ও ডেটার শুদ্ধতা পরীক্ষার ভার ছিল প্রতিষ্ঠানটির ‘স্টিল স্ট্রাকচার রিসার্চ গ্রুপ’ এর হাতে। এই থ্রিডি প্রিন্টেড কাঠামোর জন্য কোন বিষয়গুলো ঝুঁকিপূূর্ণ হতে পারে, তা-ও পরীক্ষা করে দেখেছেন তারা।
এ ছাড়াও বাস্তব বিশ্বে সেতুটির কার্যক্ষমতা এবং সেতুটির জীবণচক্র নজরে রাখতে উন্নত সেন্সর নেটওয়ার্ক তৈরির দায়িত্ব পালন করেছে ইমপেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন।
ইমপেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডনের ‘সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অধ্যাপক লিরয় গার্ডনার এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “পথচারীদের ভার সামাল দিতে পারবে এমন বড় এবং যথেষ্ট শক্ত থ্রিডি প্রিন্টেড ধাতব কাঠামো এর আগে তৈরি হয়নি।”
রোবোটিক হাত ধাপে ধাপে ঝালাই করে সেতুটির কাঠামো তৈরি করেছে। গোটা সেতুতে অনেক সেন্সর জুড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে চলাফেরা, তাপমাত্রা এবং মানুষ চলাচলের সময় কম্পন ইত্যাদি বিষয়গুলোতে নজর রাখা সম্ভব হয়। আবহাওয়ার পরিবর্তন গোটা কাঠামোতে কী প্রভাব ফেলছে তা-ও ট্র্যাক করবে সেন্সরগুলো। পরে এ সংক্রান্ত ডেটা সেতুটির একটি ডিজিটাল মডেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
প্রকৌশলীরা কম্পিউটারে সেতুর ডিজিটাল মডেলের দিকে নজর রাখবেন। সেখান থেকেই তারা বুঝে নেবেন সেতুটি কী অবস্থায় আছে এবং এর কোনো পরিবর্তন বা মেরামতের প্রয়োজন আছে কি না। এ ছাড়াও এ প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্য ভবিষ্যত থ্রিডি স্টিল কাঠামোতে ব্যবহার করবেন তারা।
ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের মার্ক গিরোলামি কাজ করছেন থ্রিডি প্রিন্টেড সেতুটির ডিজিটাল মডেল নিয়ে। তার ভাষ্যে, সচরাচর সেতুর ত্রুটির ব্যাপারে আগেভাগে কিছু জানা যায় না, এই ডিজিটাল মডেলে ক্রমাগত ডেটা আসতে থাকার ফলে সমস্যা দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে।