সম্প্রতি এক টুইটে গোটা এক গ্রহ কেনার দাবি করেছেন দুই গায়ক। তাদের ভাষ্যে, বিশ্বে এবারই প্রথম “বৈধভাবে” গ্রহ কিনলেন কেউ। মহাকাশ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা।
বৃহস্পতিবার এক টুইটে গায়ক গ্রাইমস দাবি করেন, র্যাপার লিল উজি ভার্ট বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে “বৈধভাবে” গ্রহ কিনছেন। পরে গ্রাইমসের ওই দাবি নিশ্চিত করে লিল উজি ভার্ট জানান, তিনি গ্রহটি কেনার প্রক্রিয়া পার করছেন।
এরকম খবরে নড়চেড়ে বসেন টুইটার ব্যবহারকারীরা। আদৌ এভাবে গ্রহ কেনা সম্ভব কি না তা নিয়ে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। এ ঘটনায় প্রথমে টুইটারের ট্রেন্ডিং অংশে চলে আসেন দুই গায়ক, পরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় খবর।
উজি যে গ্রহটি কিনছেন বলে গ্রাইমস দাবি করেছেন, সেটি ২০১৬ সালে আবিষ্কৃত বড় মাপের এক্সেপ্ল্যানেট ‘ডব্লিউএএসপি-১২৭পি’।
বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ বিষয়ে একাধিকবার মন্তব্যের অনুরোধ করা হলেও সাড়া দেননি দুই গায়কের কোনো মুখপাত্র। অন্যদিকে, দুই বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এভাবে “গ্রহ কেনা অসম্ভব”।
কেউ যদি তাকে কোনো গ্রহ বিক্রি করে থাকে বা তিনি সাধারণভাবে ভাবেন যে তিনি ওই গ্রহের মালিক, সেটি আদতে সত্যি নয়। এটি জালিয়াতি।” – বলেছেন ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কা-লিঙ্কনের মহাকাশ আইন অধ্যাপক ফ্রান্স ভন ডের ডাঙ্ক।
নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে ভন ডের ডাঙ্ক এবং ‘ম্যাকগিল’স ইন্সটিটিউট অফ এয়ার অ্যান্ড স্পেস ল’ –এর পরিচালক রাম জাখু তুলে ধরেছেন ১৯৬৭ সালের বহিঃস্থ মহাকাশ চুক্তি। ওই চুক্তিটির উদ্যোক্তা খোদ জাতিসংঘ। এতে পরিষ্কারভাবে সব দেশ এবং তাদের নাগরিকদেরকে বহিঃস্থ মহাকাশের জায়গা দাবি করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে।
মহাকাশের জমির মালিক হওয়ার কাছাকাছি একটা বিষয় হতে পারে খনিজ সংগ্রহ। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিভিন্ন কর্পোরেশনকে গবেষণার স্বার্থে বহিঃস্থ মহাকাশ থেকে খনিজ সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে।
তবে, ১৯৬৭ সালের ওই চুক্তি থাকা স্বত্বেও, গত কয়েক দশকে মহাকাশে জায়গা কেনার মতো দাবি অনেকবার শুনেছে মানুষ। ১৯৯৯ সালে মহাকাশ বিষয়ক সক্রিয় কর্মী গ্রেগ নেমিটজ রীতিমতো মামলাই ঠুকে দিয়েছিলেন নাসার নামে। গ্রেগের অভিযোগ ছিল, তার মালিকানাধীন গ্রহাণুতে অবতরণ করেছে নাসা। অন্যদিকে, কানাডার কুইবেক-এর এক আদালতে ২০১২ সালে মামলা ঠুকেছিলেন সিলভিও ল্যাঙভেইন নামের এক ব্যক্তি। তিনি দাবি করেছিলেন, সৌর জগতের গ্রহের মালিকানা তার। দুটি মামলাই খারিজ করে দিয়েছিলেন আদালত।
এ ছাড়াও ১৯৯০ এর দশক থেকেই ‘লুনার এম্ব্যাসি কর্পোরেশন’ লাখ লাখ মানুষের কাছে চঁদের জমি বিক্রি করে কোটি কোটি ডলার আয় করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার মানুষকে নিজের নামে তারার নাম রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। জাখু এবং ভন ডের ডাঙ্ক বলছেন, এগুলোর কোনোটারই বৈধতা নেই।
যদি কোনোদিন গ্রহ ক্রয়-বিক্রয় করাও হয়, তাহলেও এর মূল্য কয়েক লক্ষ কোটি ডলারের ঘর পার করে যাবে। ২০২০ সালে এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেব কষে জানিয়েছিলেন, বিশ্বের মূল্য দাঁড়াবে পাঁচ কোয়াড্রিলিয়নের ঘরে। মার্কিন হিসেবে এক হাজার ট্রিলিয়ন সমান এক কোয়াড্রিলিয়ন।
জাখু বলেছেন, “আপনি তাদেরকে আপনার অর্থ দিতে পারেন, কিন্তু এর কোনো মানে নেই। সবসময়ই এমন প্রতিষ্ঠান থাকবে যারা আপনার কাছে কিছু বিক্রির চেষ্টা করবে। তারা যদি অর্থ নিতে পারে, কেন নেবে না? কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেটি আইনত স্বীকৃত।”
অতীতে অ্যানটিক কেনার জন্য সুপরিচিত লিল উজি ভার্ট। এ বছরের শুরুতেই নিজের জন্য দুই কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচ করে গোলাপী হীরা কিনেছেন তিনি। এ আগে নিজের বিভিন্ন আয়োজন ও গানের মাধ্যমে মহাকাশ সম্পর্কে নিজের আগ্রহের ব্যাপারটিও তুরে ধরেছেন এই র্যাপার।
অন্যদিকে, গ্রাইমসের আরেকটি পরিচয়, তিনি টেসলা প্রধান ইলন মাস্কের প্রেমিকা। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেই এক টুইটে উজি এবং গ্রাইমস জানান, ২০২২ সাল নাগাদ মাথায় মস্তিষ্ক চিপ বসাবেন তারা।