সম্প্রতি কনফারেন্স কলে নিজেদের দ্বিতীয় প্রান্তিকের হিসাব জানাতে বসেছিল টেসলা। সেখানেই দুই বার অ্যাপলের সমালোচনা করেন টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক। টেসলা ও অ্যাপল এখনও বাজারে সরাসরি প্রতিযোগিতা করে না। অবশ্য আগামীতে অ্যাপল নিজস্ব গাড়ি নিয়ে এলে সে হিসেব উল্টে যাবে।
অ্যাপলের নিজস্ব গাড়ি প্রকল্প ‘টাইটান’ –এ কাজ করার জন্য টেসলা থেকে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক প্রকৌশলী এবং নির্বাহী। এমনকি গোটা প্রকল্পের নেতৃত্বে যিনি রয়েছেন বলে খবর রটেছে, সেই ডাগ ফিল্ড-ও টেসলায় ছিলেন পাঁচ বছর। পরে তিনি ২০১৮ সালে অ্যাপলে গেছেন।
টেসলা সরবরাহ চেইন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল মাস্ককে। সে সময় মাস্ক জানান, একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে টেসলা কোবাল্ট ব্যবহার করে থাকে। “আমার মনে হয় অ্যাপল শত ভাগ কোবাল্ট ব্যবহার করে নিজেদের ব্যাটারি, সেল ফোন এবং ল্যাপটপে, কিন্তু টেসলা কোনো কোবাল্ট ব্যবহার করে না আয়রন-ফ্রসফেট প্যাকে, এবং একদম ব্যবহারই হয় না নিকেল-ভিত্তিক রসায়নে।” – যোগ করেন মাস্ক।
টেসলা প্রধান আরও বলেন, “আমরা প্রতিদিনের ওজনের ভিত্তিতে হয়তো অ্যাপলের শতভাগের তুলনায় দুই শতাংশ কোবাল্ট ব্যবহার করে থাকতে পারি। যাই হোক, এটি আসলে তেমন কোনো বিষয় নয়।”
স্মার্টফোন ও বিদ্যুতচালিত গাড়ির লিথিয়াম আয়ন সেল তৈরির মূল উপাদান গুলোর একটি কোবাল্ট। এটি উত্তোলন হয় এমন কিছু রাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে খবর এসেছিল এর আগে, যেমন, রিপাবলিক অফ কঙ্গো। কোবাল্ট উত্তোলনের সঙ্গে শিশুশ্রমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো জড়িত। ২০১৯ সালে অ্যাপল, টেসলা এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার মামলাও করা হয়েছিল এ নিয়ে।
এ বছর প্রকাশিত সংঘাত সংশ্লিষ্ট খনিজ বিষয়ক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, তারা সব সংঘাত সংশ্লিষ্ট খনিজ এবং কোবাল্ট স্মেল্টার ও পরিশোধকের এক তালিকা প্রকাশ করেছে, এবং তাদের সব কোবাল্ট সরবরাহক ২০২০ সালে নিরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অ্যাপলের প্রতিনিধি মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিএনবিসি।
অন্যদিকে, টেসলা বৈঠকের এক পর্যায়ে মাস্ক আবারও সমালোচনা করেন অ্যাপলকে নিয়ে। সে সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে নিজ চার্জার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে দেবে কি না টেসলা।
উত্তরে মাস্ক জানান, “আমরা ধারণা, আমাদের এটিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত যে আমাদের লক্ষ্য টেকসই শক্তির আবির্ভাবে সমর্থন দেওয়া। সুরক্ষিত বাগান তৈরি করা নয় এবং তা ব্যবহার করে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুগুর পেটা করা নয় যা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করছে।”
এরপর নকল কাশি দিয়ে মাস্ক বলে উঠেন, অ্যাপল।
উল্লেখ্য, ‘সুরক্ষিত বাগান’ শব্দটি মূলত এসেছে অ্যাপলের নিজ প্রযুক্তির ব্যাপারে রক্ষণশীল আচরণ থেকে। আইফোনে কোন অ্যাপ ইনস্টল করা যাবে তা অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাপল। এমনকি ডেভেলপারদের ফি থেকেও ভালো মানের কমিশন নেয় তারা। এটি নিয়ে সম্প্রতি অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার কবলেও পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও অ্যাপ স্টোর প্রশ্নে এপিক গেইমসসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও মামলা করছে মার্কিন টেক জায়ান্ট খ্যাত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
মাস্ক ওই কলে আরও জানিয়েছেন, “সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ কিছু” বলার না থাকলে আগামীতে তিনি আর টেসলার আয় হিসাব জানানার বৈঠকে আসবেন না।